সপ্তাহের দুইদিন শুক্রবার ও মঙ্গলবার এই হাটে চলে জমজমাট বেচা-কেনা। সকাল থেকে এই হাটে খাট, চৌকি, আলনা, শো-কেস, আলমিরা, সোফা, ডাইনিং টেবিল, বেঞ্চ, চেয়ার- টেবিল থেকে শুরু করে পিঠা তৈরির সাজ, পিড়ি-বেলুন পর্যন্ত ওঠে।
দূর-দূরান্ত থেকে কারিগররা ফার্নিচার নিয়ে আসেন হাটে। এভাবে প্রতি হাটে প্রায় দুই লাখ টাকার ফার্নিচার বিক্রি হয়ে থাকে।
বেশির ভাগ ফার্নিচারে আম, পাকুর, বট বা অসাড় কাঁঠাল কাঠ ব্যবহার করা হয়। সৈয়দপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী খানসামা, পাকেরহাট, নীলফামারী, চড়াইখোলা, বড়ুয়া, তারাগঞ্জ, চিরিবন্দর, রানীরবন্দর, চম্পাতলী, বাবড়িঝাড়সহ বিভিন্ন স্থান থেকে ফার্নিচারগুলো আনেন কাঠমিস্ত্রী বা কারিগররা। শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নসিমন, করিমন বা ভ্যানে করে ফার্নিচারগুলো হাটে আনেন এবং বিক্রি না হলে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যান।
হাটে আসা কাঠমিস্ত্রী আব্দুল হালিম (৬০) বাংলানিউজকে জানান, সৈয়দপুর রেললাইনের ধারে তার কাঠের ফার্নিচারের দোকান ছিল। রেল কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদের পর বেকার হয়ে পড়েন। যেহেতু কাজ জানা আছে তাই বাড়িতে বসে বসে চৌকি, খাট, চেয়ার-বেঞ্চ তৈরি করে ঢেলাপীর হাটে বিক্রি করছেন। বর্তমানে এই কাজ করে তার পাঁচজনের সংসার ভালোই চলছে। আরেক কাঠমিস্ত্রী জমিয়ার রহমান (৪৮) জানান, বাড়িতে ফার্নিচার বানিয়ে হাটে আনেন। বিক্রিও ভালো হয়। গ্রামের রাস্তার অবস্থা ভালো নয়, তাই ভ্যানে করে চৌকি আনার সময় প্রায়ই কয়েকটি চৌকি নড়বড়ে হয়ে যায়। সেই চৌকিতে পরে পেরেক ঠুকে আবার ঠিক করতে হয়।
এই হাটে কথা হয় কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের চওড়া বাজারের কাশেম আলীর (৬৮)। তিনি জামাতা রইস উদ্দিনকে নিয়ে এসেছেন। দাবি অনুযায়ী যৌতুকের টাকা দিয়েছেন জামাইকে। এখন আবার মেয়ে-জামাই আবদার করেছেন- একটা খাট আর কাপড় রাখার আলনা কিনে দিতে হবে। সামর্থ্য কম তাই খাট সাড়ে তিন হাজার টাকায় এবং আলনা ১২’ টাকায় কিনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তিনি। কষ্ট হলেও মেয়ের সুখের জন্য ফার্নিচারগুলো কিনে দিলেন।
রোদ বৃষ্টি ঝড় হলেও উঁচু ও বালু মাটিতে হাটটি বসায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হয় না। এছাড়া হাটে ধানের বাজার, রিকশা এবং সাইকেলও বিক্রি হয়ে থাকে। তবে ধানের বাজারে সকাল ৮টার মধ্যে বেচা-কেনা শেষ হয়ে যায়। আর সাইকেল-রিকশা কেনা-বেচা চলে বিকেল পর্যন্ত।
হাট ইজাদারের প্রতিনিধি আব্দুল হক জানান, এই জনপদে ঢেলাপীর হাটটির সুনাম রয়েছে। বিশেষ করে ফার্নিচার, নতুন-পুরনো সাইকেল, রিকশা, ভ্যান বেচা-কেনা জমজমাটভাবে চলে। আর ধানের বাজারে বগুড়া, জয়পুরহাট, শেরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বড় বড় পাইকাররা আসেন। ধান কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যান। ইজারাদারের লোকজন হাটের এলাকা পাহারায় রাখেন। তাই হাটে চোর বা পকেটমার নেই। পরিবেশ ভালো থাকায় দূর-দূরান্তের ক্রেতা-বিক্রেতারা সপ্তাহের মঙ্গলবার ও শুক্রবার এই হাটে আসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৭
এসআই