একটি সেতুর অভাবে ওই এলাকার লোকজন চিকিৎসা, শিক্ষা, বিদ্যুৎসহ আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষদের।
এলাকবাসী জানায়, সরাইলের দু’টি ইউনিয়ন ছাড়াও কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও বাজিতপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের লোকজনও এ সাঁকো ব্যবহার করেন। সরাইল উপজেলার রাণীদিয়া, কাকরিয়া, রাজাপুর, অরুয়াইল, বাদে অরুয়াইল, বারপাইকা, বুনিয়ারটেক, ধামাউড়া, দুবাজাইল, পাকশিমুল, ফতেহপুর, পরমানন্দপুর, হরিপুর, ষাটবাড়িয়া ও বড়ুইছাড়া গ্রামের অবস্থান ছেত্রা নদীর পশ্চিম দিকে। এসব গ্রামের মানুষদের শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে ও বর্ষায় নৌকায় করে চলাচল করতে হয়।
এছাড়া ভৈরব উপজেলার খলাপাড়া, মেন্দিপুর, সাদেকপুর, আগানগর, জাফরনগর, শ্রীনগর ও বাজিতপুর উপজেলার নোয়াআডা, কইটুপি, মধ্যচর ও কামারবাল্লি গ্রামের লোকজনও মেঘনা পার হয়ে এ সাঁকো ব্যবহার করে সরাইল হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করেন। ১৯৯৮ সালে স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে প্রায় চার লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় দীর্ঘ এ বাঁশের সাঁকো।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ছয় ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট সাঁকোটি নারী-পুরুষসহ শিশুরাও অনায়াসে পার হচ্ছেন। আরোহীসহ মোটরসাইকেলও নির্বিঘ্নে পার হচ্ছে।
সাঁকোর উপর দাঁড়িয়ে কথা হয় রাণীদিয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক বশির আহমেদের সঙ্গে। তিনি জানালেন, নদীর পশ্চিমপাড়ের গ্রামগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ নদীর পূর্ব পাড়ের অরুয়াইলে গড়ে ওঠায় সেখানে যাতায়াত করতে সাঁকো পারি দিতে হচ্ছে।
দীর্ঘ এই সাঁকো দেখে দূর-দূরান্তের লোকজন প্রথম দর্শনে আশ্চর্য্য ও অভিভূত হয়ে পড়েন। বছরের কার্তিক মাসে সাঁকোটি বসানো হয়। আর জ্যৈষ্ঠ মাসে উঠিয়ে ফেলা হয়। বছরের সাত মাস ১৫ গ্রামের লোকজন ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সাঁকো পারি দিয়ে যাতায়াত করেন।
সাঁকো পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রাণীদিয়া গ্রামের নূর ইসলাম বলেন, প্রতিদিন এই সাঁকো দিয়ে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার লোক যাতায়াত করেন। পণ্য সামগ্রী ও শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি থাকলেও অন্যদের কাছ থেকে পারাপারের ক্ষেত্রে দুই টাকা আদায় করা হয়। ভুক্তভোগী গ্রামের লোকজন এখানে স্থায়ী একটি সেতু নির্মাণের দাবি করে এলেও আজ অবধি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
স্বাধীনতার পর প্রতিবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা এই নদীর উপর সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেতু নির্মাণ হয়ে ওঠেনি।
তবে এ বিষয়ে আশার কথা শোনালেন সরাইলের স্থানীয় সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা। তিনি বলেন, অরুয়াইলের ছেত্রা নদী ১৫ গ্রামের জন্য অভিশাপ। এই নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য আমি আধা-সরকারিপত্র (ডিউ লেটার) দিয়েছি। সংসদ অধিবেশনে একাধিকবার সেতু নির্মাণের কথা বলেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস উন্নয়ন বান্ধব সরকার আগামী নির্বাচনের আগেই এই নদীর উপর সেতু নির্মাণ করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, ০৩ এপ্রিল, ২০১৭
আরএ