মেলামাইন, সিরামিক আর অ্যালুমিনিয়ামে দখল করেছে মাটির পণ্যের বাজার। একসময় এই মাটির বাসন তৈরি করেই জীবন চলতো এক সম্প্রদায়ের।
মাটির বাসন বানানো থেকে এখন কেউ সোনার কারিগর, কেউ মোবাইলের কারিগর। এভাবেই পেশার পরিবর্তন হচ্ছে। চাহিদার সঙ্গে কমছে পেশার লোক। তবে এই শিল্প একেবারে বিলীন হবে না বলে দাবি বিশ্বনাথ পাল’র। ছোট্ট বেলা বাবার হাত ধরে মাটির কাজে যুক্ত হয়েছেন। এখন বয়স ৬৭ বছর। এখনও মনের আনন্দে তৈরি করে যাচ্ছেন খেলনাপাতি।
সেদিন ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) মেলায় প্রদর্শনীর জন্য মাটির খেলনা তৈরির ফাঁকে কথা হচ্ছিল প্রবীণ এই পালের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আজ যেখানে নিউমার্কেট, ওইসব জায়গায় যে গাতা-গুতা ছিলো, সেই মাটি দিয়ে কত বাসন বানাইছি। অহন তো মাটি পাওয়া যায় না। আর এর চাহিদাও নাই, তাই অহন আর ঢাকনা- হাড়ি-পাতিল বানাই না। যা একটু কাজ করি- সেটা ছোটদের খেলনা পাতি বানাই, আর বিভিন্ন মেলায় প্রদর্শনীতে ভাড়ায় আসি।
নিজের ঠাকুর দাদাও ছিলেন পাল, বাবাও কাজ করতেন মাটির। তবে বিশ্বনাথ পালের দুই সন্তান এখন আর এই দিকে নেই। বড় ছেলে সোনার কারিগর, আর ছোট ছেলে ওয়ালটন মোবাইল কোম্পানির কারিগর।
বিশ্বনাথ পাল বলেন, এই কাজ অহন আর নাই, থাকবো কেমনে চাহিদা নেই, মাটিও পাওয়া যায় না। কমে গেছে মাটির ব্যবহার, তবে এই পেশা একেবারে বিলীন হবে না। কারণ পৃথিবী যতদিন থাকবে বাচ্চা, কাচ্চা আইবো, খেলনার চাহিদাও থাকব বিশ্বাস তার।
বিশ্বনাথ পালের বাড়ি রাজধানীর রায়ের বাজার এলাকায়। মাটির বাসন বানানো এখন তার শখও বটে। বিভিন্ন মেলা ও উৎসবে প্রদশর্নীতেই ব্যস্ত থাকতে হয় তাকে। তবে তার তৈরি খেলনা এখনও রাজধানীর দোয়েল চত্বরে বিক্রি হচ্ছে সুনামের সঙ্গে।
সেদিন মেলার মাঠে চরকি ঘুরাচ্ছেন, আর একের পর এক বিভিন্ন আকৃতির খেলনা তৈরি করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, মন যা চায়, তাই বানাতে পারি। এখানে কোন মেশিন লাগে না, শুধু হাত আর চোখের কাজ। যতদিন বাঁচবো এই কাজ করেই যাব। এই শিল্প কখনোই বিলীন হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৭
এসএম/