প্রথমেই হাতের বাম দিকে রয়েছে গোলাপ বাগান। বিভিন্ন ধরন ও বর্ণের গোলাপ ফুটে রয়েছে সারি সারি।
কথিত রয়েছে, লক্ষীপৎ, জগপৎ, মহীপৎ ও ধনপৎ— তারা ছিলেন চার ভাই। কোথাও কোথাও পাওয়া যায়, তারা বর্গি-দস্যু ছিলেন, আবার কোনো বর্ণনা মতে তারা ছিলেন ব্যবসায়ী। যাই হোক, এই চার ভাই জগৎশেঠের সহযোগিতায় তৎকালীন নবাবের কাছ থেকে ১২শ টাকায় ৩২ বিঘার এই বাগানটি কিনে নেন মন্দির নির্মাণের জন্য। তবে এখানে মোট ২শ ৫০ বিঘা জমি ছিলো। বাগানে প্রবেশ করেই আমবাগানে এই চার ভাইয়ের ঘোড়সওয়ারি মূর্তি দেখা যায়।
জানা যায়, এই চার ভাই কাঠ ও বহু মূল্যবান মণি-মুক্তার ব্যবসা করতেন। সেখান থেকেই কাঠগোলা নাম। আবার কেউ বলে, তাদের কাঠের গোলা বা গুদাম ছিলো— সেই থেকে কাঠগোলা নাম হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, চারপাশে যে কাঠগোলাপের বাগান রয়েছে, সেখান থেকেই কাঠগোলা নামকরণ হয়েছে। তবে, এখানকার গোলাপের জুড়ি মেলা ভার।
বহুদিন এ প্রাসাদ বন্ধ বা পরিত্যক্তই ছিলো বলা যায়। ১৮৭০ সালে এ প্রাসাদটি আবার পুনর্নির্মান করা হয়, যা বর্তমানেও বহাল রয়েছে। লক্ষীপৎ সিং দুগরের বংশধর সঞ্জয় সিং দুগর ও সিদ্ধার্থ দুগর এখন এর দেখাশোনা করেন। তারা কলকাতায় থাকেন।
এখানে জৈন ঠাকুরের মন্দির ও প্রাসাদ ছাড়াও রয়েছে চিড়িয়াখানা, হেরেম ও শ্বেত পাথরে বাঁধানো পুকুর। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মহামূল্যবান আসবাব ও তৈজসপত্র।
এখানে বিখ্যাত পাশ্চাত্য ভাস্কর মাইকেলেঞ্জেলোর একটি মূর্তিও রয়েছে।
প্রাসাদটিকে ঘিরে রেখেছে চারপাশের বাগান। প্রাসাদটি বাগানের ঠিক মাঝখানেই। প্রাসাদ থেকে আরেকটু সামনে এগুলেই চোখে পড়বে আরও বড় বাগান। এই বাগানের মাঝখানে রয়েছে একটি উচু মঞ্চ। এটি নাচঘর বা জলসাঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মঞ্চটির চারদিকেই খোলা। চারদিকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এখান থেকে বাগান ও প্রাসাদটিকে আরও ভালোভাবে দেখা যায়। কলকাতা, লখনৌ, দিল্লি থেকে নামকরা নর্তকীরা এখানে এসে শেঠজিদের মনোরঞ্জন করে নিজেদের ধন্য মনে করতেন।
সেকালে হীরা নামে এক নর্তকী নাকি প্রতি সন্ধ্যায় এসে নাচ-গান করে বাবুদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে পারিশ্রমিক পেতেন।
চারদিকে বাগান আর মাঝখানে জলসাঘর, নাচগান-আভিজাত্য ও রুচিবোধের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ।
এই প্রাসাদে রয়েছে গুপ্ত পথ। এই গুপ্তপথ ভাগীরথী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। এই প্রাসাদ থেকে দুই কিলোমিটার দূরেই জগৎশেঠের বাড়ি। জানা যায়, প্রাসাদের এ গুপ্ত পথ দিয়ে নাকি জগৎশেঠের বাড়িতেও যাওয়া যেতো।
ইংরেজ বণিকরাও আসা যাওয়া করতেন। আসা-যাওয়া ছিলো জগৎশেঠেরও। জগৎশেঠের সঙ্গে এই পরিবারের ছিলো দহরম-মহরম। পলাশী পরবর্তী অনেক হটকারী ঘটনারই সাক্ষী এ প্রাসাদ ও বাগানবাড়ি।
ভিডিও (কাঠগোলা বাগান)
কিন্তু বাগানের সৌন্দর্য ও প্রাসাদের আভিজাত্যের ছায়ার কাছে কি এক দেশপ্রেমিক নবাবের রক্তাক্ত ইতিহাস ঢাকা পড়ে যাবে?
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৭
এসএনএস
**আগের পর্ব পড়ুন-
** ১ম পর্ব: এক যে ছিলো মুর্শিদাবাদ
** ২য় পর্ব: কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ
** ৩য় পর্ব: মানুষ যে হায় ভুলে গেছে চির মধুর ভালোবাসা