এভাবেই আমাদের স্মৃতি কোঠায় জমা রয়েছে মাছ ধরার নানান স্মৃতি। হারিয়ে যাওয়া সেই শৈশবের ছোট দিনগুলোতে কার না ফিরে যেতে ইচ্ছে করে।
প্রবল বৃষ্টিধারা তখন গ্রামের মাঠঘাট জুড়ে তার সজল বিস্তৃতি মেলে ধরেছে। যে দিকে চোখ গিয়ে পৌঁছে সেদিক কেবলি পানি আর পানি। জলজ প্লাবনে ভরপুর। সকাল-দুপুর-বিকেল প্রতিটি সময়জুড়েই মাছ ধরার উচ্ছ্বাস নেচে বেড়াতে থাকে শিশু-যুবাদের মনে।
সম্প্রতি অতিবৃষ্টির তোড়ে ভাসলো সারাদেশ। অনেকেই বিভিন্ন জাল, খুচা (মাছ ধরার চোখানো বস্তু) নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন মাছ ধরার আশায়। শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের জিলাপুর গ্রামের দুই শিশু তখন মাছ ধরার মহানন্দে আত্মহারা।
নাম জিজ্ঞেস করতে উত্তর এলো একজনের নাম ইমন, অপরজনের নাম শিপন। নীল গেঞ্জি পরিহিত শিপনের হাসি কিছুতেই থামছে না। হাসছে তো হাসছেই! হাসির বানে ঝরে পড়েছে নাক থেকে সর্দিবিন্দু!
হাসির কারণ জিজ্ঞেস করতেই আরো হাসি! পরে আধোভাঙ্গা হয়ে উত্তর এলো, জালে মাছ নয়, ব্যাঙ পড়েছে!
মাছ রাখার পাত্র তখনও খালি। অথচ এক ঘণ্টার পরিশ্রম তাদের গায়ে ঘাম হয়ে ঝরে পড়ছে।
ফিরে আসার সময় প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেলো শিপন! ‘কেনে নাম নিলায় বা’ (কেন নাম নিলেন) আমাকে করা এমন প্রশ্নের সংখ্যা ৮। অর্থাৎ আট বার সে ভয়ার্ত হয়ে একই প্রশ্ন করছে- পাছে সে কোনো বিপদে না পড়ে! ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী শিপন স্থানীয় বিলাশের পাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। কিন্তু তার সঙ্গী ইমন এখনো স্কুলেই যায়নি।
একজন বিদ্যালয়ের বর্ণমালায় আশ্রিত; অপরজন গ্রামীণ প্রকৃতির উদাসী হাওয়ায় লালিত। সময়ের পথ ধরে একজন হয়তো এগিয়ে যাবে জীবনসফলতার পথে। অপরজন হয়তো তুলনামূলকভাবে পেছনেই পড়ে থাকবে দুঃখ-গ্লানি আর হতাশা বয়ে বয়ে।
তবে শৈশবস্মৃতিরা আর পিছিয়ে পড়া প্রিয় শৈশববন্ধুরা জীবনের মনিকোঠা থেকে কখনোই হারায় না। জীবনের কোনো এক মুহূর্তের একবিন্দু অবসরে তারা প্রতিবারই পাশে এসে নীরবে দাঁড়ায়। ...
বাংলাদেশ সময়: ০৮১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৭
বিবিবি/জেডএস