ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

মারুফের লাল শার্ট!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৮ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
মারুফের লাল শার্ট! মারুফ

ঢাকা: মিরপুর-১ নম্বর গোল চত্বর এলাকায় গাড়িগুলো ছুটছে ভিন্ন সব গন্তব্যে। বাস থেকে যাত্রী নামতেই চোখে ও কানে পড়বে লেগুনার শিশু-কিশোরদের (হেলপার) যাত্রী তোলার হাঁক-ডাক।

এসব লেগুনার বেশিরভাগ হেলপারের বয়স সাত বছর থেকে ১২ বছর। যে বয়সে শিশুদের পিঠে থাকার কথা স্কুলের ব্যাগ আর হাতে থাকার কথা কলম সেই বয়সে এ শিশুদের হাত থাকছে লেগুলার ঝুলন্ত হ্যান্ডেল আর পা থাকছে ঝ‍ূঁকিপূর্ণ পাদানিতে।

এমনই এক শিশু মারুফ।

মঙ্গলবার (২০ জুন) বিকেল সাড়ে তিনটা। মিরপুর এক নমম্ব গোল চত্বর মোহাম্মদপুর, ঝিগাতলা বলে ডাকছে মারুফ। গোল চত্বর এলাকায় ফুটপাতে হকাররা বসেছেন শিশুদের বাহারি রঙের পোশাক নিয়ে। জিগাতলা ডাকতে ডাকতেই মারুফ হাঁটতে থাকে হকারের দোকানের দিকে।

লাল রঙের শার্টে কালো রঙের বল প্রিন্ট করা। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মারুফ। শার্টে হাত দিয়ে ধরতেই দোকানি চেঁচিয়ে উঠেন, ‌ঐ ছ্যাড়া ধরিস না, ময়লা ভরবো। নষ্ট হইলে কি তোর বাপে ট্যাকা দিবো। ’

হঠাৎ লেগুনার ড্রাইভার চিৎকার দিয়ে মারুফকে ডাকে, ‘ঐ মারুইপ্পা। ঐ হানে খাম্বার লাহান দাঁড়ায়া থাকলে কি যাত্রী আইবো। ’ মুখটা মলিন হয়ে উঠে মারুফের। লেগুনার পাদানিতে দাঁড়ায়া নিজের মনেই বলে উঠে ‘ওস্তাদরে কমু ঈদে খালি ইমুন একটা শার্ট কিন্না দিতে। ’ চোখটা ছল ছল করছে মারুফের। আর বারবার ফিরে তাকাচ্ছে লাল শার্টটির দিকে।

‘বাবু শার্টটা কি খুব পছন্দ হইছে’ জানতে চাইলে হাসি মুখে বলে, ‘হয়। ’ কিনলো না কেন জানতে চাইলে বলে, ট্যাকা নাইতো। প্রতিদিন বাড়ি ফিরলে ওস্তাদ যেই ট্যাকা দেয় মারে দিয়া দেই। আর সারাদিন ওস্তাদই টুক টাক খাওয়ায় বলেই ফের তাকায় সেই লাল শার্টের দিকে।

শার্টের দাম কতো জানতে চাইলে মুখটা বেশ মলিন করে বলে, দুইশ' ট্যাকা। লাল শার্টটি কেনার জন্য দুইশ' টাকা দিতে চাইলে বলে, না না আমি মানষের ট্যাকা নেই না। মায় মানা করছে। আর ওস্তাদ কইছে বোনাস দিবো না। বোনাসের ট্যাকা দিয়া চান রাইতে কাপড় কিনা দিবো। তহন ওস্তাদরে কমু ইমুন একটা লাল শার্টই কিন্না দিতে।

দরিদ্র্য ছেলেটির দুইশ' টাকা না নেওয়ার বিষয়টি দেখে অবাক লেগুনার যাত্রীরা। একজন বলেই বসলেন, পোলার ভাব দেখছো। মাশআল্লাহ। কয়জন পারে এমন করে টাকা ফেরত দিতে। এসব কথায় নজর নেই মারুফের। নিজের মতো লেগুনার গায়ে কোমল হাতটি দিয়ে বারবার থাপ্পর দিয়ে কখনো যাত্রী নামাচ্ছে কখনো বা যাত্রী তুলছে।

মারুফের বাবা একজন রিকশাচালক আর মা সেও যখন যে কাজ পান তাই করেন। মারুফরা চার ভাই-বোন। মারুফের সবার ছোট।

এ রাজধানীতে বিভিন্ন শপিংমলগুলোতে যখন শিশুরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী একাধিক ঈদের পোশাক কিনতে ব্যস্ত তখন মারুফের মতো শিশুদের ফুটপাতের একটি লাল শার্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয় চাঁদরাতের। তাও সে তা পাবে কিনা তার নেই নিশ্চয়তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
এএটি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।