বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রহমান সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এই বহুমাত্রিক লেখকের প্রথম প্রয়াণ বার্ষিকীর স্মরণসভা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে লেখককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
তিনি বলেন, ‘মহান এই লেখকের সঙ্গে তার মৃত্যুর আগের রাতেও আমার কথা হয়েছিলো। আমরা ফোনে কথা বলছিলাম। তিনি বললেন, আমার অসুখটা আমি তোমাদের দিতে পারবো না। কিন্তু তোমাদের সব অসুখ আমার আছে। কেননা আমি অন্য পথের যাত্রী। ’
বিশিষ্ট কবি নূরুল হুদা বলেন, ‘অন্য পথের এই যাত্রীটির আরেক নাম বহুমাত্রিকতা। থিয়োরি অব এলিমিনেশন এর মধ্য দিয়ে যদি ‘বহুমাত্রিকতা’ শব্দটি ভাঙতে হয়, তবে তা হচ্ছে সৈয়দ শামসুল হক। তার বহুমাত্রিকতার মতো আর কাউকেই আমি স্মরণে আনতে পারি না। কেননা তিনি চিরজীবিদের দলে। তাকে বারবার পাঠ করতে হবে। ’ এসময় কবি নূরুল হুদা তার স্বরচিত কবিতা পাঠ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিশিষ্ট এই লেখকের প্রতি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন-নাট্যজন রামেন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, ‘ভাষার ওপর সৈয়দ শামসুল হকের ছিলো অসাধারণ দখল। তাইতো তিনি রবীন্দ্রনাথের মতো শব্দকে ব্যবচ্ছেদ করতে পেরেছেন। ’
একই সুরে কণ্ঠ মেলালেন বহুমাত্রিক লেখক হাসনাত আব্দুল হাই। তিনি বললেন, ‘রেনেসার যুগে বুদ্ধিজীবীদের জ্ঞান রাখতে হতো সব বিষয়ে। সৈয়দ শামসুল হকও ঠিক তেমনি একজন। তাইতো বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলের পরেই তার স্থান। ’
লেখকের শিল্পকর্মের দিক তুলে ধরে এসময় তিনি আরো বলেন, তার চিত্রকর্ম খুব বেশি খ্যাতি অর্জন না করলেও তাদের রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট। আর আইনস্টাইন যেমন নিজেকে আনন্দ দিতে ভায়োলিন বাজাতেন, সৈয়দ শামসুল হকও তেমনি ছবি আঁকতেন আনন্দের জন্য। আর মৃত্যু শয্যাতেও দিক নির্দেশনা দিয়ে তিনি তার স্ত্রীকে দিয়ে লিখিয়েছেন একাধিক গল্প কবিতা। যা সমগ্র বিশ্বে বিরল। আর তাইতো তার সাহিত্য সম্ভার থেকে আমরা অবশ্যই ঋদ্ধ হতে পারি।
অনুষ্ঠানে লেখকের স্ত্রী আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন লেখকের ব্যক্তি জীবনের কথা। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘তিনি খুব সহজে খুশী হতেন। একটু ডাল ভর্তা বা বেগুন পোড়া পেলেই তার সন্তুষ্টি মাত্রা ছাড়াতো। নিজের জামা কাপড় পরিষ্কার করতেন নিজেই। আবার নিজেই সেগুলো ইস্ত্রি করতে ভালোবাসতেন। তিনি ভীষণ সৌখিন ছিলেন। জীবনে নিজে কখনো কোনো খেলা না করলেও, কোথাও একটা লাফ না দিলেও খুঁজে বেড়াতেন খেলোয়ারদের মতো পোশাক। আর দেশি পোশাকেই মিলতো বেশি খুশি।
এছাড়া যে মানুষটিকে নিয়ে আজ ৩৭টি পত্রিকা বিশেষ লেখা প্রকাশ করেছে, সেই মানুষটি ছিলো সারাজীবন অসাধারণ সহজ সরল। তার সঙ্গে এতটা পথ একসঙ্গে হেঁটেও যেন বুঝতে পারিনি তিনি এতটা বড়, যতটা আপনারা দেখেন’ বলে যোগ করেন তিনি।
আর ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বললেন, দীর্ঘ কবিতা এবং কাব্যনাট্যে সৈয়দ শামসুল হক এনেছেন নতুন মাত্রা। রোগ যখন তার শরীরে ছড়িয়ে গেছে, তখনও তিনি সাহিত্যে নিমজ্জিত ছিলেন সম্পূর্ণরূপে। তাইতো সেই সময়েই আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন ‘রুগি’ আর ‘রোগী’র পার্থক্য। ’
অনুষ্ঠানে লেখকের উদ্দেশে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি পিয়াস মজিদ।
আরো বক্তব্য রাখেন-প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম, স্থপতি ও লেখক শাকুর মজিদ, বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক মফিদুল হকসহ বিশিষ্টজনেরা। আর স্মৃতিচারণসহ লেখকের গান-কবিতার মাধ্যমে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে তা আরো সুন্দর করে তোলেন অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিব ফয়জুল হক।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৭
এইচএমএস/আরএ