শুধু কি বনলতা সেন? এই গ্যালারিতে আছে তার বাবা-মা আর বোন। রয়েছে ভিক্ষুকদের রাজা, সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালানো গৃহলক্ষ্মী, কৃষ্ণলীলা, বাউল, প্রকৃতি, নিসর্গ, জীবন ও যুদ্ধসহ হরেক বিষয়।
ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে এ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন করেছেন ৫১ জন শিল্পী। এদের মধ্যে ২৬ জন ভারতীয়, ২৫ জন বাংলাদেশি। এই ৫১ জন শিল্পী তাদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে তুলে ধরেছেন তাদের শিল্পকর্ম। চিত্রকর্মগুলোর সবকটিতেই ঐহিত্যের বিষয়ে সচেতনতা ও আবেগ লক্ষ্য করা যায়।
বাংলাদেশে প্রাচ্য-চিত্রধারাকে নতুনভাবে সমসাময়িক চিন্তাভাবনায় উপস্থাপনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে এ প্রদর্শনী। যেখানে প্রদর্শিত হচ্ছে প্রাচ্য-চিত্রকলার বিভিন্ন বিষয়, মাধ্যম ও কৌশলের চিত্রকর্ম।
অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মধ্যে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচ্যকলা বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রাপ্ত শিল্পীবৃন্দ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। রয়েছেন ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ ও ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্টের শিল্পীবৃন্দও।
৫১ জন শিল্পীর ৮০টি শিল্পকর্মে প্রাচ্যরীতির বিভিন্ন মাধ্যম, টেকনিক ও শিল্প-অনুভূতির নানা অনুষঙ্গের প্রভাব লক্ষ্যণীয়। বিশেষত অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর-প্রবর্তিত জলরঙের ওয়াশ পদ্ধতিতে বেশিরভাগ কাজ করা হয়েছে। রয়েছে মিনিয়েচার পেইন্টিং, ঐতিহ্যবাহী ওয়াশ পেইন্টিং, সিল্ক পেইন্টিং, টেম্পারা পেইন্টিং প্রভৃতি। সবক’টিতেই প্রাচ্যকলার সমৃদ্ধ ধারা ও ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলার ব্যাপারটি সুস্পষ্ট।
কথা হয় প্রদর্শনীর কিউরেটর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং চেয়ারম্যান ড. মলয় বালার সঙ্গে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এই প্রদর্শনী আয়োজনের উদ্দেশ্য শিল্পী ও শিল্পরসিকদের তাদের সাংস্কৃতিক শেকড়ের সন্ধান দেওয়া ও মনে করিয়ে দেওয়া। পাশাপাশি পাশ্চাত্য ধারার পরিবর্তে আমাদের নিজস্ব ধারার শিল্প-ঐতিহ্যের চর্চাকে অনুপ্রাণিত করা।
প্রাচ্যশিল্প নিয়ে তিনি বলেন, বিশিষ্ট শিল্পী নন্দলাল বসুর মতে প্রাচ্যশিল্পের বিশেষত্ব হচ্ছে গতি, ভঙ্গি, ছন্দ ও ব্যঞ্জনা দিয়ে ভাবকে প্রকাশ করা। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী ৫১ জন শিল্পীই তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যের বিষয়ে সচেতন। তারা বাংলাদেশে প্রাচ্যকলার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচনে ব্রতী।
৯ অক্টোবর এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন শিল্পী রফিকুন নবী, কবি নির্মলেন্দু গুণ, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এবং ভারতীয় শিল্পী স্বপন দাসসহ বিশিষ্টজনেরা।
সবার জন্য উন্মুক্ত এ প্রদর্শনী চলবে আগামী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত। খোলা থাকবে প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়:১৬৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৭
এইচএমএস/জেএম