কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তিপ্রধান বিশ্বে পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই ঢাকা পড়ে গেছে ইন্টারনেটের কারণে। আজকাল কম্পিউটারের সামনে বসে কিবোর্ডে চাপ দিলেই চলে আসে প্রয়োজনীয় তথ্য।
তারপরও থেমে থাকেনি পাঠাগার নির্মাণ। একুশ শতকেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল বিশাল সব পাপঠাগার। মানুষের আগ্রহ বাড়াতে কোনো কোনো পাঠাগারে প্রয়োগ করা হয়েছে/হচ্ছে অসাধারণ সব নতুনত্ব।
এবার জেনে নেয়া যাক, এ শতাব্দীতে নির্মিত অনন্য বৈশিষ্ট্যধারী কয়েকটি পাঠাগার সম্পর্কে।
পেকহাম পাঠাগার, লন্ডন, যুক্তরাজ্য
লন্ডনের পেকহাম পাঠাগার সফলতার দিক থেকে আধুনিক পাঠাগারগুলোর অন্যতম। নির্মাণশৈলীর দিক থেকেও এর ভবনটি অনন্য। ২০০০ সালে নির্মিত এই পাঠাগার ভবনটির ডিজাইনার উইল আসলোপ ভবনটিতে ব্যবহার করেছেন উজ্জ্বল নীল রং। গতানুগতিক পাঠাগার ভবনের ধারণা থেকে এর নকশা একেবারেই ভিন্ন। ভবনটি দেখলে মনে হবে যেন কোনো নাইট ক্লাব। আর এখানেই পেকহাম পাঠাগারের অনন্যতা। নির্মাণকাজ শেষ হবার পর ভবনটি পেকহামের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়। এক বছরের মধ্যে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ফিলোলজিকাল পাঠাগার, বার্লিন, জার্মানি
স্থপতি নরমান ফস্টারকে যখন ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব বার্লিনের জন্য একটি পাঠাগারের নকশা করতে বলা হয়, তখন তিনি প্রথমেই ভেবে দেখেন কোন পরিবেশে মানুষ বই পড়তে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। খোলামেলা পরিবেশে গাছের ছায়ায় বসে সূর্যের আলোতে বই পড়ার বিষয়টিই তার সবচাইতে পছন্দ হয়। তাই ফিলোলজিকাল লাইব্রেরিতে রয়েছে পর্যাপ্ত সূর্যালোক প্রবেশের ব্যবস্থা। ২০০৫ সালে পাঠাগারটি নির্মাণ করা হয়।
জাতীয় পাঠাগার, রিগা, লাতভিয়া
লাতভিয়ার জাতীয় পাঠাগার লাইব্রেরি দেশটির অনেক উত্থানপতনের সাক্ষী। ১৯১৯ সালে দেশটির স্বাধীনতা অর্জনের পর রিগা শহরে এটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ১৯৪০ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন দেশটি দখল করে নিলে পাঠাগারটি এর পদমর্যাদা হারায়।
১৯৯০-এর দশকের গোড়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পর লাতভিয়া দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করে। এরপর জাতীয় ঐতিহ্য পুনর্নির্মাণের উদ্দেশ্যে দেশটি আবার জাতীয় পাঠাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৪ সালে পাঠাগারের নির্মাণকাজ শেষ হয়। একই বছর রিগা শহরকে ইউরোপের সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণা করা হয়।
বিবলিওথিকা আলেক্সান্দ্রিয়া, মিশর
রোমান সেনাপতি জুলিয়াস সিজার ভুল করে মিশরের আলেক্সান্দ্রিয়া পাঠাগারে অগ্নিসংযোগ করেছিলেন। এ অগ্নিকুণ্ডের হাত থেকে রক্ষা করা যায়নি ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ পাঠাগারটিকে। এতে প্রায় লক্ষাধিক পুঁথি ও শিল্পকর্ম চিরতরে হারিয়ে যায়।
২০০২ সালে আলেক্সান্দ্রিয়ায় আবার পাঠাগার নির্মাণ করা হয়। অসাধারণ ডিজাইনের এ পাঠাগারে রয়েছে ১৩টি গবেষণাগার ও ১৫টি এক্সিবিশন গ্যালারি। প্রতিবছর প্রায় ১৫ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটে এই পাঠাগারে। ব্রান্ডেনবুর্গ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি পাঠাগার, জার্মানি
পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি একত্রীকরণের একবছর পর ১৯৯১ সালে জার্মানির ব্রান্ডেনবুর্গ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি স্থাপিত হয়। কর্তৃপক্ষ এখানে এমন একটি পাঠাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়, যা জার্মানির অবিচ্ছিন্নতার প্রতীক বহন করবে। তাই পৌরাণিক গল্পের ‘টাওয়ার অব বাবেলের’ অনুকরণে ২০০৪ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারটি নির্মাণ করা হয়।
উল্লেখ্য, পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী অনেক আগে পৃথিবীর সব মানুষ একই ভাষায় কথা বলতো। তাই তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে অনেক উঁচু একটি টাওয়ার নির্মাণ করতে থাকে যা এক সময় স্বর্গকে স্পর্শ করবে। ঈশ্বর ব্যাপারটি খেয়াল করলেন। মানুষ এভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে কোনো কিছুই আর তাদের পক্ষে অসম্ভব থাকবে না! তাই ঈশ্বর মানুষের ভাষাকে বিশৃঙ্খল করে দেন, যাতে একজন আরেকজনের কাছে মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারে। কাহিনী মতে, এরপর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা শুরু করে।
লাইব্রেরিটি বাইরে থেকে দেখলে পৌরাণিক দালান বলে মনে হলেও, এর ভিতরের অংশের পুরোটাই আধুনিকতায় সজ্জিত।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৭
এনএইচটি/জেএম