ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বৃষ্টির জীবনে হঠাৎ বৃষ্টি নেমেছিল….

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
বৃষ্টির জীবনে হঠাৎ বৃষ্টি নেমেছিল…. এই সেই বৃষ্টি। ছবি: কাশেম হারুন

ঢাকা: নাম বৃষ্টি (ছদ্ম নাম)। বয়স ১৫। পরনে ছিল ফ্রগ ও হাফ প্যান্ট। আজ থেকে ৫ বছর আগে জামালপুরের ইসলামপুর থেকে নিখোঁজ হয় সে। তারপর নিজেকে সে আবিস্কার করে এক নিষিদ্ধ পল্লীতে। সে জানতে পারে, তার যে আত্মীয় তাকে শহরে কাজ দেবে বলেছিল, সেই তাকে এখানে এনে বিক্রি করে গেছে।

সেখানকার লোকেরা যখন তাকে অনৈতিক কাজের জন্য জোর করছিল তখন সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। কারণ, সে যখন বুঝতে পারে যে, তার সঙ্গে খারাপ কিছু হতে চলেছে।

তার সঙ্গে যা হচ্ছিল তার কিছুতেই সে রাজি ছিলো না। কিন্তু সেদিন নর পিশাচরা সেই ছোট্ট মেয়েটিকে ছাড়েনি। তার উপর অমানবিক নির্যাতন চালায় তারা।  

ঘটনাক্রমে সেই নরক দুয়ার থেকে উদ্ধার পায় বৃষ্টি। বিয়ে করে স্বামী সন্তান নিয়ে শুরু করে পথসংসার। চাল চুলো নেই। রাস্তার ধারের দোকান কিংবা হোটেলই তাদের ভরসা। স্বামীর আয় থেকে কিছু টাকা মেয়ের জন্য, আর বাকি টাকা নিজেদের জন্য খরচ করে। হয়তো জীবনটা আরো সাজানো গোছানো হবে। এক সময় সুখে ভরে উঠবে বৃষ্টির সংসার। কিন্তু সেই দু:সহ স্মৃতি তাকে তাড়া করে ফেরে। কোনোভাবেই স্মৃতি থেকে মুছতে পারে না সেই ভয়াল রাতের স্মৃতি।  
 
রোববার (১৫ অক্টোবর) ভোর রাতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে বাংলানিউজকে জীবনের গল্প বলছিলো ৫ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া বৃষ্টি।
 
বৃষ্টি বলে, সেখানে (নিষিদ্ধ পল্লীতে) আমার কোন কিছু ভালো লাগতো না। আমি সব সময় কান্নাকাটি করতাম। একদিন এই ছেলে (পাশে ঘুমিয়ে থাকা লোকটাকে দেখিয়ে) আমার কান্না দেখে আমার সঙ্গে কথা বলে। আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
 
তার প্রতি স্বামীর ভালোবাসার কথা জানিয়ে মেয়েটি বলে, সে অনেক ভালো একটা ছেলে। সে আমার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। অনেক সময় পাবলিকের হাতে মার খেয়েছে। এতো কিছুর পরও সে আমাকে ছেড়ে যায়নি। আমিও তার সঙ্গে ভালই আছি। আমরা দুজনে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেছি। এখন আমাদের ঘরে ৩ বছরের এক কন্যাসন্তান। অবশ্য আমার কাছে থাকে না। মেয়েটি থাকে আমার শাশুড়ির কাছে।
 
স্বামীর গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুর। সে আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমাকে কোন কাজ করতে দেয় না। সে পাথরের আঙটি বিক্রি করে সংসার চালায়, মেয়ের জন্য টাকা পাঠায়।
 
গ্রামে যান নি কেনো? জানতে চাইলে বৃষ্টি বলে, স্বামী আমাকে কয়েকবার বলেছিল গ্রামের বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু আমি কোন মুখ নিয়ে তাদের সামনে যেতাম। আমার সাহস হয়নি। কারণ আমি তো নিষিদ্ধ জগতের বাসিন্দা ছিলাম।
 
সামনের দিনগুলোতে কি করতে চান? বৃষ্টি স্বপ্ন দেখেন, তার স্বামী চানাচুরের নতুন ব্যবসা শুরু করবে, তার মেয়েটাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে শিক্ষিত করে তুলবে। তার সাজানো গোছানো সংসার হবে। এসবের মধ্য দিয়ে ভুলে থাকতে চায় সেই দু:সময়ের স্মৃতি।
 
বৃষ্টি আরো বলে, আর কোন বৃষ্টি যেনো আমার মতো ঝরার আগেই ঝরে না যায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
এএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।