অঞ্চলভেদে সলতে-প্রদীপ ও আলপনা হয়ে যায় দিয়া আর রঙ্গোলি। বাঙালিদের যেটি বাজি-পটকা, অবাঙালি অন্য রাজ্যে সেটি পাটাকা বা যাই হোক— উৎসব, আনন্দ, উদ্দীপনা একই।
সনাতন ধর্মালম্বীদের পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব বাংলা আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর দিন ধনতেরাস অথবা ধনত্রয়োদশী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দীপাবলি উৎসবের সূচনা হয়। কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উৎসব শেষ হয়। নবরাত্রি উৎসব অথবা বাঙালিদের দুর্গোৎসব শেষ হওয়ার ১৮ দিন পর দীপাবলি শুরু হয়। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে সাধারণত মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বরের মধ্যে পড়ে। পশ্চিমবাংলা, আসাম, ওড়িশ্যা ও মিথিলাতে এই দিনটি কালীপূজা হিসেবে উদযাপন করা হয়।
দোকানপাট, শপিং মলে অফারের ছড়াছড়ি। নতুন জামা-কাপড়, নানারকম বাজি-পটকা, নকশাকাটা সলতে-প্রদীপ, মোমবাতি, আলপনার রঙ কেনার ধুম। নগরের বাবুদের কার এতো সময় আছে! সেজন্য মিলছে রেডিমেড দিয়া, রঙ্গোলি থেকে পূজার প্যাকেজ উপকরণ।
‘অসৎ হইতে সত্যে লইয়া যাও, অন্ধকার হইতে জ্যোতিতে লইয়া যাও, মৃত্যু হইতে অমরত্বে লইয়া যাও। সর্বত্র যেনো ছড়াইয়া পড়ুক শান্তির বার্তা’— এই শান্তির কামনা ও বার্তা পৌঁছে দিতে এদিন সবাই সবাইকে মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। বলাই বাহুল্য, মিষ্টির দোকানে লম্বা লাইন। ডিজিটাল যুগ তাই শুভেচ্ছা বার্তা হিসেবে ই-বার্তা, ই-কার্ড তো রয়েছেই। মোশন পিকচার ও ভিডিওরও ছড়াছড়ি।
উত্তর ভারতীয় হিন্দুরা আবার দিনটিকে অন্যভাবে মানে। দীপাবলি বা দিওয়ালির দিনেই রামচন্দ্র চৌদ্দ বছরের নির্বাসনের পর অযোধ্যা ফেরেন। নিজেদের পরমপ্রিয় রাজাকে ফিরে পেয়ে অযোধ্যাবাসীরা ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে সাজিয়ে তোলেন তাদের রাজধানীটাকে। এই জায়গা থেকে উত্তর ভারত বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের অনেক অঞ্চলে রামের উদ্দেশ্যে পুজো দেয়। বাড়ি সাজিয়ে তোলে দিয়া জ্বালিয়ে।
বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই আকাশে-বাতাসে পটাশ-পটাশ আওয়াজ। বুঝতে বাকি থাকে না, দিওয়ালি এসে গেছে। বাড়ির ছাদ, উঠান, রাস্তা বা খোলা জায়গায় বাচ্চাদের হট্টোগোল। বড়রাও কম যান না। কখনও কখনও রঙ-বেরঙের আতশবাজির ফুলকি ছড়িয়ে পড়ছে গোটা আকাশে।
অনেক বাড়িতে দিওয়ালির আগের রাত থেকেই শোভা পাচ্ছে দিয়া, ফুল-রঙ বা চাল দিয়ে বানানো বাহারি রঙ্গোলি। কেউ বৃহস্পতিবার বানাবে বলে ছুট লাগিয়েছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায়।
এদিন সন্ধ্যা হতে ঘরে ঘরে জ্বলে উঠতে শুরু করেছে সলতে। কেউ দরজার বাইরে পেতেছে রেডিমেড রঙ্গোলি, কেউ বানিয়েছে নিজের হাতে। বাড়ির ছেলে-বুড়ো উঠানে বাজি পোড়াচ্ছে। পটপট করে ফুটছে দিওয়ালির আনন্দ। চারদিকে মিষ্টির ছড়াছড়ি। অটো-ক্যাবওয়ালা, চায়ের দোকান— বাঙালি রাজ্য থেকে বহুদূরে তাই যার সঙ্গেই দেখা হচ্ছে‘হ্যাপি দিওয়ালি’ই বেশি শুনতে হচ্ছে।
দীপাবলি নামটির অর্থ ‘প্রদীপের সমষ্টি’। এই প্রদীপ জ্বালানো অমঙ্গল বিতাড়নের প্রতীক। বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সারা রাত প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলে ঘরে লক্ষ্মী আসেন বলে সনাতন ধর্মীদের বিশ্বাস।
যার ধর্ম তার কাছে কিন্তু দীপাবলি হোক বা দিওয়ালি— মঙ্গল ও শান্তির আলো ছড়িয়ে পড়ুক সবার কাছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৭
এসএনএস