সে এক দেখার মতো দূর্গ। বলা হয়, ভারতের হাতেগোনা সবচেয়ে সুন্দর দূর্গগুলোর একটি।
ফিরে যাওয়া যাক গল্পে। ছিলাম কুতুব শাহী সাম্রাজ্যের সপ্তম সুলতানের কথায়। ঠিক একই সময় দুর্গের পাশে একটি সরাইখানায় নাচতেন-গাইতেন তারামতি আর তার বোন প্রেমামতি। যা হওয়ার তাই, সুলতান আবদুল্লাহর কানে যেতেও বাদ রইল না। ডাক পড়লো দরবারে। নাচের নানা মূদ্রা আর সঙ্গীতের রাগ-রাগিণীতে ভরে উঠলো মজলিশ, সেইসঙ্গে মুগ্ধ সুলতানও। এতোটাই মুগ্ধ হন যে, গুণবতী দুই বোনকে সরাইখানা থেকে নিয়ে এসে রাখেন তার অতিথিশালায়। এরপর থেকেই দুই বোন সুলতানের খাস মজলিশে নৃত্য ও গান পরিবেশন করতেন।
এভাবে চলতে চলতে একসময় তারামতির প্রেমে পড়ে গেলেন আবদুল্লাহ। অবশ্য এ রাজবংশের সুলতানদের প্রেমে পড়াটা নতুন ছিলো না। সালতানাতের পঞ্চম সুলতান মোহাম্মদ কুলি কুতুব শাহ প্রেমে পড়েছিলেন ভাগমতি নামে এক নারীর সৌন্দর্যের। তিনি ভাগমতির সম্মানে তার রাজ্যের একটি অংশের নামকরণ করেন ‘ভাগিনীগর’, যা বর্তমানে হায়দ্রাবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
আবদুল্লাহও কম যাননি। তারামতির নামে দূর্গ-পাহাড়ের চূড়ায় বারদারী সঙ্গীত দরবার তৈরি করেন। প্রেমামতির জন্যও গড়ে দেন আলাদা একটি নৃত্যস্থান। কিন্তু তারামতির প্রতি সুলতানের ভালোলাগা ছিলো সবচেয়ে বেশি। তার রূপ, গান আর নৃত্যে এতোটাই মুগ্ধ হয়ে পড়েন যে, মুগ্ধতা-ভালোলাগা গড়ায় ভালোবাসায়। স্থানীয় লোকবিশ্বাস, দুর্গটি সেই নিবিড় প্রেমের এক নীরব সাক্ষী।
কিন্তু তাদের ভালোবাসা কোনোদিন চুড়ান্ত পরিপূর্ণতা পায়নি। কেন পায়নি তা জানা যায়নি কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, দুই বোনের সমাধি হয়েছিল রাজবংশের নিজস্ব কবরস্থানে, অন্যান্য সুলতানদের স্ত্রীদের সঙ্গে।
সাধারণত অপূর্ণ ভালোবাসায় সাক্ষী থাকে চাঁদ-সূর্য-গ্রহ-নক্ষত্র। এসবের সঙ্গে সঙ্গে তাদের দু’জনের তুমুল প্রেমের সাক্ষী ছিলো দুর্গের প্রতিটি খিলান আর বোবা ইট-পাথর। পরিপূর্ণতা না পাওয়া এ প্রেমের জন্যই নাকি তাদের মুক্তি মেলেনি। সেজন্য আজও তারামতির অতৃপ্ত আত্মা দুর্গের এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়ায়!
স্থানীয় অনেকেই নাকি গভীর রাতে দরবার থেকে কিন্নরী কণ্ঠে গান ও ঘুঙুরের ঝমঝম আওয়াজ শুনতে পান। অনেক পর্যটকই নাকি এখানে এসে নানা ভীতিকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। সবই শোনা গল্প। বংশ পরম্পরায় বয়ে চলেছে গল্পের নদ-নদী।
দূর্গের বিশালতা, প্রায় সাড়ে ৪শ বছরের পুরনো সব স্থাপনা, শত শত অন্ধকার কক্ষ, ফাঁকা-নির্জন প্যাসেজ, টিলার চড়াই-উৎরাই, বুনো লতা-পাতা সব মিলে এক ভীতিকর পরিবেশ এমনিতেই তৈরি হয়ে যায়। সেই সঙ্গে অতৃপ্ত আত্মার গল্প জুড়ে একেবারে ষোলআনা জমে ওঠে।
সৌন্দর্য ও নির্মাণশৈলীর কারণে গোলকুন্ডা দূর্গটি এমনিতেই পর্যটক আকর্ষণী স্থান, সেইসঙ্গে বহু দক্ষিণী সিনেমার শুটিং হওয়ায় রোজ হাজারো পর্যটক ভিড় করে এখানে। হায়দ্রাবাদ শহর থেকে মাত্র ১২ কিমি দূরে হওয়ায় দলবেঁধে ঘুরতে আসে সবাই।
দূর্গের নিরাত্তকর্মীরাও জানালেন একই গল্প। মুখে একগাল হাসি নিয়ে জানালেন, সন্ধ্যার পর অনেকেই রহস্যময় ও ভৌতিক পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন শুনেছি। সূর্য ডুবলেই নাকি অদ্ভুত সব আওয়াজ ভেসে আসে। ভৌতিক অবয়বের দেখাও নাকি মেলে! এমনকি দূর্গের ধ্বংসস্তূপ থেকেও নাকি অনেকে নানা আওয়াজ শুনেছেন। বর্তমানে সন্ধ্যা ৬টার পর দূর্গে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
আরও জানান, এ দূর্গে শুটিং করতে এসেও নাকি নানা পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন শুটিংয়ের কর্মীরা, যে ঘটনার তারা কোনো যুক্তি খুঁজে পাননি!
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৭
এসএনএস