ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

গোষ্ঠলীলা শেষ, অপেক্ষা মহারাসের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৭
গোষ্ঠলীলা শেষ, অপেক্ষা মহারাসের বালকের দল নিজেদের সাজিয়েছে বালকৃষ্ণ রূপে; ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর; ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর

মাধবপুর, কমলগঞ্জ ( মৌলভীবাজার) থেকে: কৃষ্ণবাঁশি হাতে একের পর এক মণ্ডপে ঢুকছে শিশুরা। শরীরে তাদের শ্রীকৃষ্ণবসন। জরির টুপি, গলায় মালা আর কপালে চন্দনের ফোঁটা নিয়ে কৃষ্ণ হয়েছে তারা। সবাই ছেলে, বয়স আট থেকে পনেরো। নৃত্যগীতের মধ্য দিয়ে এরাই সবার সামনে তুলে ধরবে শ্রীকৃষ্ণের শিশুকালের বিভিন্ন অংশ ও তার শ্রীকৃষ্ণ হয়ে ওঠার গল্প।

বলছিলাম মণিপুরি সম্প্রদায়ের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব রাশলীলার রাখাল নৃত্যের কথা। শনিবার (৪ নভেম্বর) দুপুর ১টা থেকে শুরু হয় এ গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নাচ।

স্থানীয় ভাষায় এ নাচকে ‘রাখুয়াল’ বলা হয়। এ নাচ চলে গোধূলি লগ্ন পর্যন্ত। এরপর অপেক্ষা মাহারাসলীলার। চলবে রাত ১১টা থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত।

বালকেরা বাঁশি-হাতে শ্রীকৃষ্ণকে সাথে নিয়ে ঘুরতে থাকে বনবাদাড়ে। গরু চরাতে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণ সেখানে নানান ঘটনার সাথে যুক্ত হন। সেসব ঘটনাকে নৃত্যের মধ্য দিয়ে মে তুলে ধরে খুশি করার চেষ্টা করা হয় শ্রীকৃষ্ণকে।

রাখুয়াল নাচ প্রসঙ্গে কথা হয় আদমপুর রাসমেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি মণীন্দ্রকুমার সিংহের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘বাল্যকালে শ্রীকৃষ্ণ, তার সখা বলরাম ও অন্যান্য রাখাল-বালক গরু চরাতে গিয়ে যেসব ঘটনার সম্মুখীন হয়, তাই রাসে রূপায়িত হয়েছে। আর মণিপুরি শাস্ত্রীয় নৃত্যের বৈষ্ণব ভক্তিভাবাপন্ন নরম কোমলভাবের বিপরীতে এখানে তাণ্ডব ধারার নৃত্যই প্রধান। ’

গোষ্ঠলীলা শেষ, ভক্তদের অপেক্ষা এখন  মহারাসের; হোসাইন মোহাম্মদ সাগরমহা রাসলীলা উপলক্ষে দুই জায়গাতেই মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আদমপুর ও মাধবপুরে বসে গ্রামীণ মেলা। এ উপলক্ষে এখানকার মণ্ডপগুলো কাগজের কারুকাজে চোখ ধাঁধানো নকশায় সাজানো হয়। এরই মাঝে মণিপুরি শিশু নৃত্যশিল্পীরা রং-বেরংয়ের পোশাকে সুনিপুণ নৃত্যাভিনয়ে মুগ্ধ করে রাখে ভক্ত আর দর্শনার্থীদের।

রাখুয়াল নাচের মাঝে মাঝে শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে ছুড়ে দেওয়া হয় বাতাসা ও কলাসহ বিভিন্ন খাদ্যবস্তু। তারপর করা হয় প্রার্থনা। স্থানীয়ভাবে একে বলা হয় ‘লুট’ বা হরিলুট। আর লুট শ্রীকৃষ্ণকে খাবার দিয়ে সন্তুষ্ট করার একটি মাধ্যম বলে জানালেন বিশিষ্ট মণিপুরি সংস্কৃতির গবেষক ড. সমরজিৎ রায়।

তিনি বলেন, ‘লুট’-এর মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে যে খাবার দেওয়া হয় তা আবার ভক্তরাই গ্রহণ করেন। এটা অনেকটা প্রসাদের মতো একটি বিষয়। তবে এর রয়েছে আলাদা বিশেষত্ব। ঠিক যেমন আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে মণিপুরিদের নৃত্যে।

মণিপুরি নৃত্যের রয়েছে গৌরবময় পটভূমি। নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ধ্রুপদীধারা এরই মধ্যেই মণিপুরিদের জন্য একটি বিশেষ স্থান ও মর্যাদা এনে দিয়েছে। মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজন ছাড়াও জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ মিলিত হন রাসলীলার এ আনন্দ উৎসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৭
এইচএমএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।