নেমে আসা সূর্যডোবার পালার সঙ্গে এই কুঁড়ে ঘরের সম্পর্ক বহু পুরানো। প্রভাতী সূর্যের আলো কুঁড়ে ঘরের চারপাশে সোনালী আলো ছড়ায়।
সে নিঃসঙ্গ কুঁড়ে ঘরগুলোতে তিনটি পরিবারের দিনযাপনের দায়। পাহাড়ি নিরক্ষর মানুষগুলো, যাদের চাওয়া কেবল সামান্য আয়-রোজগার আর পরিবারের জন্য দু’মুঠো অন্ন। কুঁড়ে ঘরের এই মানুষগুলো বড়ই সরল!
নেই তাদের কোনো প্রকারের বিত্তবৈভবের স্বপ্ন। নেই উচ্চ বিলাসী বাসনা। নেই, সেই অধরা স্বপ্নে ছুটতে ছুটতে শরীরময় বিষন্নতার ছাপ! তামাটে টলটলে দেহ জানান দেয় তাদের দৈনিক কায়িক পরিশ্রমের কথা। রোগশোক ঘিরতে পারে না এই সম্মিলিত দেহের অনুকূলে।
সম্প্রতি মৌলভীবাজার বন বিভাগের সাতগাঁও বিটের গভীর অরণ্য পরিভ্রমণ শেষে পাহাড়িসংলগ্ন কুঁড়ে ঘরগুলো দেখা মেলে। কুঁড়ে ঘরের সীমানায় গিয়ে দেখা যায় বসতিদের সহজ-সরল জীবনযাপন। এর এক পাশে ক্লোনেল চা বাগানের সীমানা।
ওই এলাকায় গিয়ে কথা হয় তগিয়া সাওতাঁলের সঙ্গে। তিনি জানান, এই একটি ঘরে সাওতালসহ অন্য দুটি পরিবার রয়েছে। পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় বারো। প্রত্যেকেই দিন মজুরের কাজ করে থাকেন।
ক্লোনেল চা বাগানের শ্রমিক সলিল মাহান্তি বলেন, আমাদের এ অঞ্চলের এখনো কুঁড়ে ঘর চালু রয়েছে। আমরা গরীব অসহায় মানুষেরা অল্প টাকায় কম খরচে কুঁড়ে ঘর বানিয়ে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই করে থাকি বাবু।
এই এলাকার ছেলে-মেয়েরা কি স্কুলে পড়ে? এর উত্তরে ‘হ্যাঁ-সূচক’ জবাব দেন সলিল।
কুঁড়ে ঘর ঘিরে তখন সূর্যডোবার পালা। একটু পরই রাত্রি নামবে ঘনকালো হয়ে! বাংলার প্রকৃতি থেকে আজ কুঁড়ে ঘরে বিলীন হতে চলেছে। এগুলোই আমাদের লোকজ সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল নির্দশন। যা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য বাঙালি সংস্কৃতির এক হারিয়ে যাওয়া উপাদান হিসেবে গণ্য হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ পিএম ঘন্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৭
বিবিবি/বিএস