বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে তখনও বিভিন্ন রুটের অফিস বাসগুলো এসে পৌঁছায় নি। সুনশান মতিঝিলকে মনে হচ্ছে বিরান।
'অফিস টাইমে রাস্তায় সুঁই ফেলার মতো সামান্য জায়গাও থাকে না। ' বললেন লিটন চন্দ্র রায়। মতিঝিলের প্রধান সড়কের হীরাঝিল হোটেলে নাস্তা করতে করতে কথা হচ্ছিল পাশে বসা ব্যাংক কর্মকর্তা লিটন বাবুর সাথে। 'যানজট এড়াতে আমি অফিস সময়ে খানিক আগেই চলে আসি। দেরি হলে প্রাণান্তকর জটে কষ্ট করতে হয়। '
বঙ্গভবনের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে লিটন বাবুর সাথে হাঁটতে হাঁটতে দিলকুশা দিয়ে চলেছি। সেখানেও চারপাশে চলছে অন্য রকম আয়োজন। 'সাংসারিক হেন জিনিস নেই যে আপনি এখানে পাবেন না! সময় বাঁচাতে লোকজন অফিস শেষে বাড়ি ফেরার পথে প্রয়োজনীয় বাজার এখান থেকেই সেরে নেন। ' লিটন বাবুর কথার সত্যতা পাওয়া গেল। কাঁচা বাজার ও মনোহারী দোকানের সব আইটেম দেখা যাচ্ছে ফুটপাতের দোকানগুলোতে।
খানিক এগিয়ে দেখতে পেলাম, দিলকুশার নানা গলির ফাঁক-ফোকরের হোটেলগুলোতে সে সময় আরেক চিত্র। বাহারি আয়োজন নজর কাড়ে। অসংখ্যা বাঁশের বেড়া দেওয়া কাঁচা হোটেল ঘরের আঙিনায় চলছে মাছ, মাংস, শাক-সবজি কাটা-বাছার তোড়জোড়। পয়-পরিষ্কারের বালাই নেই বাজারি রন্ধন কর্মে। নোংরা পানি, অপরিচ্ছন্ন থালা-বাসনেই সারা হচ্ছে খাবার-দাবার রান্না। উদাম হাঁড়ি নামানো হয়েছে ফুটপাতে। হাল্কা ধোঁয়ার নিচে দেখা যাচ্ছে হাঁড়ির ভেতর বিরিয়ানি। ফুটপাতে জায়গা নেয়া হাঁড়ির গা-ঘেষেঁ ছলছল ময়লা পানির নর্দমা।
একি! চট করে লাল সালু চাপিয়ে হাঁড়িতে লেবেল পড়ল, 'শাহি বিরিয়ানি!' এক নিমিষেই নালাপাড়ার খাবার জাতে ওঠে গেল।
দেশের প্রাচীন ও প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে নিত্যদিন দেখতে পাওয়া ঝাঁ-চকচকে সাজানো-গোছানো চেহারার আড়ালে লুকানো রয়েছে অন্য অবয়ব। সাদা-কালো টাকা কিংবা বৈধ-অবৈধ ব্যবসার মতোই দিন ও রাতের প্রহরে প্রহরে মতিঝিলে চলছে আলো ও অন্ধকারের নানা খেলা।
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৭
এমপি/জেডএম