ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বিন্নি-বোয়ালে জামাই আদর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৭
বিন্নি-বোয়ালে জামাই আদর বিন্নি ধানের ক্ষেত। ছবি: বাংলানিউজ

হবিগঞ্জ: বলা হয়ে থাকে আতিথেয়তাই গ্রাম-বাংলার মানুষের মূল বৈশিষ্ট্য। বাড়িতে মেহমান এলে বিদায়বেলা পর্যন্ত তাকে খুশ রাখাই যেন বাঙালি নারীর সবচেয়ে বড় সাফল্য। আর সেই মেহমান যদি মেয়েজামাই হয় তাহলে তো শাশুড়ির আদরের সীমা থাকে না। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে নতুন ধানের সময়টা জামাই দাওয়াতের মৌসুম হিসাবে পরিচিত। এই জামাই দাওয়াতের বিশেষ একটি খাবার হচ্ছে বিন্নি ধানের চাল, সঙ্গে বোয়াল মাছের কুড় আর গাভীর দুধ।

আমার বাড়ি কবিতায় পল্লী কবী জসীম উদ্‌দীন এর লেখা- ‘শালি ধানের চিঁড়ে দেব/বিন্নি ধানের খই/বাড়ির গাছের কবরী কলা/গামছা-বাঁধা দই। ’ লাইনগুলোও অতিথি আপ্যায়ন বিন্নি ধানের গুরুত্ব তুলে ধরে।



যদিও অন্য জাতের তুলনায় বিন্নি ধানের ফলন কম হয়, তারপরও কৃষকরা অতিথি আপ্যায়নে এই জাতের ধান কম করে হলেও চাষ করে থাকেন।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ৮ উপজেলায়ই এরবার রোপা আমনের মৌসুমে এ ধানের চাষ হয়েছে। গেল বোরো মৌসুমে আগাম বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়াতে মন ভাল নেই কৃষকের। তারপরও এ মৌসুমে শখের বিন্নি ধান চাষ থেকে বিরত থাকেননি তারা। অধিকাংশ কৃষকই অন্যান্য জাতের ধানের পাশাপাশি এ ধান চাষ করেছেন।

বিন্নি চালের ভাত।  ছবি: বাংলানিউজ হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. সুভাষ দেব বাংলানিউজকে জানান, বিন্নি ধান বৃহত্তর সিলেট-ময়মনসিংহ অঞ্চলের স্থানীয় জাতের ধান। মূলত বিন্নি ধান দুই ধরনের। একটা কালো, অপরটি লাল। তবে দুটির ভাতই আঠালো, সুগন্ধযুক্ত। এই বিন্নি ধান অনেকটা জেপনিকা (Japonica) জাতের। জাপান ও কোরিয়াতে বহুল প্রচলিত স্টিক রাইসের সাথে এর মিল রয়েছে। পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে অন্যান্য ধানের তুলনায় এটি উত্তম। এতে প্রোটিনের পরিমাণ অন্যান্য ধানের তুলনায় বেশি। এটি ডায়াবেটিসের জন্যও উপকারী।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পিরিজপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শীতকাল এসেছে, মেয়েজামাই তার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসবেন। তাদের আপ্যায়নে বিন্নি চালের ভাত, বোয়াল মাছ আর ঘরের গাভীর দুধ তো দিতেই হবে। তা না হলে আমার মেয়ের মুখ ছোট হয়ে যাবে।

বানিয়াচং উপজেলার জাতুকর্ণপাড়া গ্রামের কৃষক তৌফিক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমার বড় ভাই পুলিশ অফিসার। তারা শহরে বিন্নি’র চাল সহজে পান না। তাই তাদের জন্য পাঠাতে হবে। ঘরে ধান ওঠানোর কাজ শেষ হলেই, চাল নিয়ে ঢাকায় যেতে হবে। ভাই এবং তার বন্ধুরা শীত মৌসুম এলেই আমাদের বাড়ির বিন্নি চালের অপেক্ষায় থাকে।

জলসুখা গ্রামের কৃষক আশিক মিয়া বাংলাউনিজকে বলেন, আমার বোনের বাড়িতে প্রতি বছরই বিন্নি ধানের চাল পাঠাই। এবারো চাষ করেছি। ধান তোলা শেষ হলেই আমার স্ত্রীকে নিয়ে বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাব। সে সময় অনেক কিছু নিয়ে যেতে হবে। এগুলোর মাঝে প্রধান আকর্ষণ হলো বিন্নি ধান।

বিন্নি ধানের গোছা তুলে ধরে পরীক্ষা।  ছবি: বাংলানিউজড. সুভাষ দেব বাংলানিউজকে বলেন, জনসংখ্যা বদ্ধি ও চাষের জমি হ্রাস পাওয়ায় এখন কৃষকরা হাইব্রিড ধান চাষে ঝুঁকছে। ফলে এসব স্থানীয় জাতের ধান চাষ একেবারেই কমে গেছে। তবে এসব উপকারী জাতের ধান আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য চাষ করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।