সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বরিশাল, ঝালকাঠি, কুমিল্লা, ঢাকা, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, টাঙ্গাইল ও নেত্রকোনায় এগাছ প্রচুর পাওয়া গেলেও শীতলপাটির বুননশিল্পীদের বেশিরভাগই বৃহত্তর সিলেটের চারটি জেলার নীচু এলাকায় বসবাস করে। এগুলো হলো বালাগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেট।
এখানে বুননশিল্পীরা বংশপরম্পরায় পাটি বুনন কৌশল আয়ত্ব করেন। সিলেট অঞ্চলের পাটির ঐতিহ্য শতবর্ষী। প্রায় ১০০ গ্রামের চার হাজার পরিবার সরাসরি এই কারুশিল্পের সাথে জড়িত। পাটির বুননশিল্পীরা ‘পাটিয়াল’ বা ‘পাটিকর’ নামে পরিচিত বলে জানালেন বুননশিল্পী ইমদাদুল হক। জাতীয় জাদুঘরে শীতল পাটির বিশেষ প্রদর্শনীতে শীতল পাটি তৈরির কাজ করছেন চারজন শিল্পী। একটির সাথে আরেকটি মুর্তা নিখুঁতভাবে বুননের মধ্য দিয়ে পাটিতে পাখি, ফুল-লতা-পাতা বা অন্যান্য জ্যামিতিক নকশা,মসজিদ, চাঁদ-তারা, পৌরাণিক কাহিনীচিত্র, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহীদমিনার, শাপলা, পদ্ম ও কখনো প্রিয়জনের নামে রচিত কবিতা পাটিকে অনন্য মাত্রা দিয়ে থাকে।
কথা হয় দর্শক হাফিজুর রহমানের সাথে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, শীতলপাটি দেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এ প্রদর্শনীতে এসে বেশ ভালো লাগছে। একসঙ্গে এতগুলো ডিজাইনের শীলতপাটি তো সচরারচ দেখা যায় না। আর শহুরে জনগণ তো এখন পাটি চেনেই না। এ প্রদর্শনী শীতলপাটিকে সকলের সামনে তুলে ধরতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। ব্যবহারের উপর নির্ভর করে শীতল পাটির আকার-আকৃতি ও ডিজাইনের বৈচিত্র্য দেখা যায়। এ প্রদর্শনীতে বিভিন্ন দৈনন্দিন ব্যবহারের উপযোগী নানা ধরনের শীতলপাটি উপস্থাপন করা হয়েছে।
শীতল পাটির বুননে নারী-পুরুষ উভয়েই কাজ করে থাকেন। তবে নারী বুনন শিল্পীরা বুননের কাজে অধিকতর শিল্পিত ভূমিকা রাখেন। পুরুষশিল্পী মুর্তা সংগ্রহের পরে পরিবারের সদস্যরা পরিষ্কার করে তা সরু করে কেটে শুকানো, নখানি, দা দিয়ে সরু করে বেতী তোলা, রং করার জন্যে জ্বাল দেয়া, পানিতে শুকানো, রোদে শুকানো প্রভৃতি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বুনন উপযোগী করে তোলেন।
মুর্তা গাছের ‘বেতী’কে (বেত) বুননের উপযোগী করে তোলা থেকে শুরু করে শীতলপাটি বোনা অবধি প্রতিটি ধাপ পিতা থেকে পুত্র, মাতা থেকে কন্যা পরম্পরায় পারিবারিক শিল্প হিসেবে পরিবাহিত হয়ে আসছে।
বুননের মাধ্যমে দর্শকদের সরাসরি পাটি বুননকৌশল দেখানোর জন্য সিলেট থেকে চারজন সুদক্ষ পাটি শিল্পীকে আনা হয় এ প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনী সম্পর্কে কথা হয় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর সাথে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, শীতলপাটি দেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। হস্ত ও কুটিরশিল্প হিসেবে এই শিল্পের বিকাশ লাভ হয়েছে। নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবেও এর গুরুত্ব অনেক। এছাড়া সম্প্রতি এ পাটিকে ইউনেস্কো বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা দেওয়ায় এর গুরুত্ব আরো বেড়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে শীতলপাটির এ প্রদর্শনী চলবে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে এ প্রদর্শনী উন্মুক্ত সবার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৭
এইচএমএস/জেএম