আবুল কালাম আজাদ রংপুর কাউনিয়া রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে ছোট্ট একটি ঘর ভাড়া নিয়ে চা বিক্রি করছেন। পাশেই বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী ও চার সন্তান।
আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে জানান, রেলওয়ে কাউনিয়া স্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য দৈনিক এক থেকে দেড়শ’ কাপ চা স্টেশন কোয়াটারে পাঠাতে হয়। কর্মকর্তারা অন্য দোকানের চা পান করেন না। বিকেল হতে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে চা বিক্রি। এরপর গ্লাস ও কাপসহ দোকান পরিস্কার করতে তার সময় লাগে তিন ঘণ্টা। গ্লাস বা কাপে যতক্ষণ নিজের ছবি দেখা যাবে না ততক্ষণ চলে পরিস্কার করার যুদ্ধ। দুই ঘণ্টায় পরিস্কার করলেন ১১টি গ্লাস ও ১৭টি কাপ।
খাবারের দোকানে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাই বড় পুঁজি যোগ করেন কালাম।
একা সামলানো অসম্ভব তাই তাকে সহযোগিতা করেন তার ভাগ্নে মিলন। মামা ভাগ্নে মিলে শত শত কাস্টমারকে সেবা দিয়ে দৈনিক বিকিকিনি করেন প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। প্রতি কাপ চা বিক্রি হয় মাত্র ৫ টাকা। এ টাকায় চলে তার ৭ সদস্যের সংসার। বড় মেয়ে ১০ম, বড় ছেলে ৮ম শ্রেণি, বাকীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে। শত কষ্টেও কালামের লক্ষ সন্তানদের শিক্ষিত করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা।
স্বাক্ষর জ্ঞানের আবুল কালাম আজাদ বলেন, এরই মাঝে বড় মেয়ের বিয়ের জন্য অনেক প্রস্তাব এসেছে। বাল্যবিয়ে দেয়া অপরাধ জেনে তা ভেঙ্গে দিয়েছি। ঘটক আর ছেলের বাবারা অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রাজি হইনি।
কারণ জানতে চাইলে কালাম বলেন, বাল্যবিয়ে দেওয়ার অপর নাম আদরের মেয়েকে হত্যা করা।
কালামের চা প্রেমি শ্যামল চন্দ্র বলেন, পরিচ্ছন্নতা ও ব্যবহার দেখে চায়ের দোকানে মানুষের ভিড় লেগে থাকে। এ দুই গুনের সঙ্গে বাড়তি গুণ গাভির খাঁটি দুধে চা পাওয়া যায় এ দোকানে। এ জন্য যত ব্যস্থতাই থাক, কালামের এক কাপ চা না হলে ঘুম হয় না।
রংপুর এক্সপ্রেসের পরিচালক মাসুদ বাংলানিউজকে জানান, কাউনিয়া স্টেশনে ট্রেন এলে কালামের চায়ের লোভ সামলানো বড়ই কষ্টকর। গাভির খাঁটি দুধের এক কাপ চা যেন সারাদিনের ক্লান্তিকে দুর করে দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৭
বিএস