খ্রিস্টাব্দ ১৪ থেকে ১৬ শতকের মধ্যে যেসব পর্যটক ভারতে এসেছেন, তারা প্রত্যেকেই তৎকালীন হাম্পি নগরীরর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। কেউ কেউ উল্লেখ করেন, মধ্যযুগে বেইজিং-এর পরে সবচেয়ে বড় শহর ছিলো হাম্পি এবং একইসঙ্গে ভারতের সবচেয়ে ঐশ্বর্য আর সম্পদশালী নগরী।
প্রত্নতাত্ত্বিক বিস্ময়ের এ শহরের উত্থান-পতন নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে ‘ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যস্থান হাম্পি সাম্রাজ্যে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে। এ পর্বে থাকছে সেরা ১০ আশ্চর্য নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
লোটাস মহল
হাম্পির হাজারো নিদর্শনের ভিড়ে আলাদা করে দাগ কেটে যায় লোটাস মহল। পদ্মফুলের ফুটন্ত কুঁড়ির আদলে বানানো বলে নাম কমল বা ইংরেজিতে লোটাস মহল। এটি চিত্রগনি মহল নামেও পরিচিত। বিজয়নগর রাজপরিবারের নারীরা এটি ব্যবহার করতেন। হাতিশালার ঠিক সামনে অর্থাৎ জেনানা এনক্লোজারের মধ্যে এটি অবস্থিত।
পাথরের রথ
যারা দক্ষিণী সিনেমা বিশেষ করে তেলেগু মুভি দেখে অভ্যস্থ তারা দেখলেই চিনবেন। বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় এ রথ অর্থাৎ চ্যারিয়টটি হলো হাম্পির আইকন। পুরাণে, লর্ড ভিত্তালা হলেন বিষ্ণুর আরেক রূপ। বিষ্ণুর বাহন হলো গরুড় (ঈগলদের দলনেতা)। গরুড়ের আদলেই এই রথটি বানানো এবং সেজন্যই এর স্থান হয়েছে ভিত্তালা মন্দির কমপ্লেক্সে। পাথরের রথটির চারপাশজুড়ে বিভিন্ন পৌরাণিক যুদ্ধের চিত্র খোদাই করা। এটি হাম্পির সবচেয়ে পর্যটক আকর্ষণী সেলফি জোন। ছবি তোলার জন্য এক সেকেন্ডের জন্যও খালি পাওয়া মুশকিল।
ভিত্তালা মন্দিরের মিউজিক্যাল পিলার
এ এক বিস্ময়! মন্দিরের কোনো একটি পিলারে টোকা দিলে সারগাম বাজে— এজন্য এদের বলা হয় মিউজিক্যাল পিলার। স্বাভাবিকভাবেই সারগাম শোনার আগ্রহ চরমে! কিন্তু বেশি মানুষের নাড়ানাড়ির কারণে মিউজিক্যাল পিলারের অংশটির নাজুক অবস্থা। বর্তমানে সেই অংশে সংস্কার কাজ চলায় শোনা হলো না পিলারের সারগাম।
মহানবমী প্লাটফর্ম
বিদেশি প্রত্নতাত্ত্বিকরা এর নাম দিয়েছেন, হাউজ অব ভিক্টরি। গ্রানাইট পাথরে নির্মিত এ নিদর্শনটির চারদিকে বিজয়নগর রাজাদের সব যুদ্ধজয়ের চিত্র খোদাই করা— সেখান থেকেই এই নাম। এটি আসলে এক ধরনের অডিয়েন্স হল। দশেরা উৎসবের আগে মহানবমী পালিত হতো এখানে। রাজ অতিথিরা জড়ো হতেন, রাজা সবাইকে ঘুরিয়ে দেখাতেন বিজয়নগর সাম্রাজ্যের বীরত্বের কাহিনী।
কুইনস্ বাথ
রাজরানির গোসলের স্থান। পাথরে পাথর সাজিয়ে অনিন্দ্যসুন্দর নকশায় যে এতো নান্দনিক গোসলের স্থান হতে পারে তা না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়! মাঝখানে পানি আর চারদিকে পাথরের নকশা ও সিঁড়ি।
বীরুপক্ষ মন্দির
মন্দিরটি অবশ্য বিজয়নগর সাম্রাজ্যেরও আগের। খ্রিস্টাব্দ ১১ শতকে এটি ছিলো শিবের দুই অংশ দূর্গা ও পম্পার মন্দির। পরে ১৪ শতকে বিজয়নগরের রাজারা এটিকে সম্প্রসারিত করে ১৬০ ফুট গোপুরাম প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এটি ভারতের অন্যতম প্রাচীন জাগ্রত মন্দিরগুলোর একটি। রোজ হাজারো পূণ্যার্থী ভিড় করেন বীরুপক্ষ মন্দিরে।
নরসিংহ ও বড়লিঙ্গ
কৃষ্ণমন্দিরের দক্ষিণেই রয়েছে দুই পৌরাণিক বিস্ময় বিষ্ণুর নরসিংহ অবতার ও শিবলিঙ্গ। নরসিংহের উচ্চতা ২২ ফুট, যেখানে মানুষ-সিংহরূপী বিষ্ণু যোগাসনে রয়েছেন। শুরুর দিকে নরসিংহের সঙ্গে দেবী লক্ষ্মীও ছিলেন কিন্তু কালের বিবর্তনে সেটি এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। অন্যদিকে, শিবলিঙ্গের উচ্চতা ৯.৮ ফুট। এজন্যই নাম বড়লিঙ্গ। ঘনকাকৃতির চেম্বারে পানির মধ্যে এটি বসানো।
আন্ডারগ্রাউন্ড শিব মন্দির
নরসিংহ ও বড়লিঙ্গ পয়েন্টের কাছেই। এই মন্দিরটি মাটির নিচে প্রতিষ্ঠিত। দেখতে হলে যেতে হবে হাঁটু অব্দি পানি ডিঙিয়ে।
হাতিশালা
সামন্তীয় যুগে হাতি ছিলো আভিজাত্য ও শৌর্যের প্রতীক। যে রাজার কাছে যতো বেশি হাতি থাকতো তাকে ততো বেশি ক্ষমতাবান আর প্রতাপশালী মানা হতো। ঘোড়া রাখতে যেমন ঘোড়াশালা, তেমনি হাতি রাখতেও হাতিশালা থাকবে বৈকি! বিজয়নগর রাজাদেরও ছিলো হাতিশালা। এতেও তাদের সৌখিনতা বহাল।
জেন মন্দির
বিজয়নগর সাম্রাজ্যে যে কেবল হিন্দু দেব-দেবীদের মন্দিরই ছিলো তা নয়, ছিলো বেশ কয়েকটি নান্দনিক জেন মন্দিরও।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৭
এসএনএস