ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

পাদুকায় স্বাবলম্বী মুন ও মুন্নীরা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
পাদুকায় স্বাবলম্বী মুন ও মুন্নীরা পাদুকা তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা

ঢাকা: শীতল পাটি, পাট আর কাপড় দিয়ে তৈরি জুতা জোড়া। এক জোড়া নয়, একাধিক। দারুণ সে জুতার আরো একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তা সম্পূর্ণ হাতে তৈরি। আর সেগুলো তৈরি করেছেন সমাজের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন তৃতীয় লিঙ্গের লোকেরা।

লো-গস বাংলাদেশের উদ্যোগে ১০ জন ট্রান্সজেন্ডার (তৃতীয় লিঙ্গ) বর্তমানে কাজ করছেন ‘পাদুকা’তে। তাদের তৈরি সেসব জুতা নিয়েই শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর গ্রিন হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে হয়ে গেলো একদিনের প্রদর্শনী।

প্রদর্শনীতে কথা হয় পাদুকায় কর্মরত মুন ও মুন্নির সঙ্গে। তারা বলেন, ‘সমাজ হিজড়া সম্প্রদায়কে যেখানে অবহেলা করে, সেখানে লো-গসে আমাদের কাজ করাটা একটা বড় ব্যাপার। এখানে কাজের মধ্য দিয়ে নিজেকে সাবলম্বী করার পাশাপাশি পাচ্ছি আলাদা সম্মান। যা আমাদের জন্য সাধারণভাবে পাওয়া সম্ভব হয় না’।

লো-গসের স্বত্ত্বাধিকারী লুলু আল মারজান বলেন, লো-গস একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সাধারণ মানুষের মতো করে সমাজের এ বিচ্ছিন্ন মানুষগুলোকে কাজে লাগানো এবং তাদের দিয়ে নতুন কিছু করানোটাই মূল ব্যাপার। তারা এখানে কাজ করছে, তাদের কাজ দেশের বাইরে রপ্তানি হচ্ছে। তারা কখনোই আর পাঁচটা মানুষের থেকে ভিন্ন নয়।

তিনি বলেন, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যখন নতুন জনবল নেয়, তখন তাদেরকেও শিখিয়ে নিতে হয়। এদের ক্ষেত্রেও তাই। এরা কাজ শিখে নিজেদের প্রমাণ করছেন দারুণভাবে।

তাদের হাতেই তৈরি হচ্ছে এসব জুতাপাদুকা থেকে জুতা কিনলেন সুমাইয়া আফরোজ ও তিতাম। কথা হলে বাংলানিউজকে তারা বলেন, আর সবার মতো না হয়ে এ মানুষগুলো নিজেরা কিছু করছে, এটা সত্যিই আনন্দের। আশা করি এ সূচনার মধ্য দিয়ে সমাজে তাদের অবস্থান পরিবর্তনের কাজ শুরু হবে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লো-গস বর্তমানে তাদের পাদুকার সামগ্রী রপ্তানি করছে। এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন ১০ জন ট্রান্সজেন্ডার। আগামীতে আরো কিছু জনবল নিয়োগ করা হবে বলেও জানান প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী।

লো-গসের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করছেন নূর আলম। তিনি বলেন, সাধারণ কর্মজীবীদের থেকে এ মানুষগুলো কোনো অংশে কম নয়। বরং এদের কাজের আগ্রহটা আরো বেশি।

প্রমাণ মিললো হাতে হাতেই। বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ক্রেতা আসলেন দোকানে। আলাপ বন্ধ রেখেই মুন মনোযোগী হলেন ক্রেতার দিকে। বিক্রির কাজ সম্পন্ন করে আবার ফিরলেন কথায়। বললেন, নিজে কাজ করার গর্বটা একটু অন্যরকম। এর একটা আলাদা সুখ আছে। ক্রেতাদের সাড়াও রয়েছে দারুণ।

লো-গসের কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা হয় সমাজকর্মী জয়া শিকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ একেবারেই নতুন। সরকারিভাবে এ জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু ব্যবহারিক শিক্ষা কার্যক্রম থাকলেও তা সার্টিফিকেট পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। তবে এরপর কি হবে, তা আর ভাবা হয় না। লো-গসের পদক্ষেপ সময়োপযোগী। এভাবে সমাজের অন্য জায়গাতেও যদি বিচ্ছিন্ন এ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাবে তাদের মূলধারায় ফেরাতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
এইচএমএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।