ব্রাজিল, এক সময় যারা বিশ্ব ফুটবলকে ‘সাম্বা’ দিয়ে মোহিত করে রেখেছিল, সেই দলটি এখন বছরের পর বছর বিশ্বকাপের মঞ্চে ব্যর্থতার গল্প লিখছে। আর সেই হতাশার ছায়া দূর করতে এবার তারা তুলে দিচ্ছে তাদের ভাগ্যের চাবিকাঠি এক ইতালিয়ানের হাতে।
ব্রাজিলের সমস্যাটা কোথায়?
২০০২ সালে ব্রাজিল যখন শেষবার বিশ্বকাপ জেতে, তখন রোনালদো-রিভালদোদের যুগ। এরপর দুই দশক কেটে গেলেও তারা ছুঁতে পারেনি সেই উচ্চতা। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে ৭-১ গোলে জার্মানির কাছে বিধ্বস্ত হওয়া যেন ছিল আত্মবিশ্বাসের শেষ পর্ব। এরপর ২০১৮ সালে বেলজিয়াম, ২০২২ সালে টাইব্রেকারে ক্রোয়েশিয়া রুখে দেয় তাদের স্বপ্ন। সর্বশেষ আর্জেন্টিনার কাছে হারের পর কোচ দরিভাল জুনিয়রকেও বিদায় নিতে হয়।
এরপরই আসে ‘প্রজেক্ট আনচেলত্তি’।
কেন আনচেলত্তি?
কার্লো আনচেলত্তির কোচিং রেকর্ড ঈর্ষণীয়।
- ৫টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা
- ইতালি, স্পেন, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স—সবখানেই লিগ জয়
- রিয়াল মাদ্রিদে ভিনিসিয়ুস-রদ্রিগোদের বিকশিত করা
- দলের ভেতরে ভারসাম্য ফেরানো এবং শান্ত, স্থির নেতৃত্ব।
ব্রাজিলের ফুটবলে বহুদিন ধরেই এক দ্বন্দ্ব চলেছে—রঙিন ফুটবল নাকি কাঠামোগত কৌশল? আনচেলত্তির কোচিং দর্শন এই দুইয়ের মেলবন্ধন। তিনি জানেন, কখন দলকে স্বাধীনতা দিতে হয়, আর কখন নিয়ন্ত্রণ দরকার।
‘বিদেশি’ হলেও ঘরের চেনা নাম
ব্রাজিলের ইতিহাসে আনচেলত্তি চতুর্থ বিদেশি কোচ, তবে তিনিই প্রথম যিনি এই ধরনের বড় দায়িত্ব পেলেন।
একসময় যাদের ধারণা ছিল, শুধু ব্রাজিলিয়ানরাই ব্রাজিলের ফুটবল বুঝতে পারে, সেই বিশ্বাস ভাঙে ২০১৯ সালে পর্তুগিজ কোচ হোর্হে জেসুস ফ্ল্যামেঙ্গোকে ঐতিহাসিক সাফল্য এনে দেওয়ার পর। সেখান থেকেই বদল আসে দৃষ্টিভঙ্গির।
ভিনিসিয়ুস, নেইমার ও নতুন প্রজন্মের ভরসা
ভিনিসিয়ুস জুনিয়র এরই মধ্যে আনচেলত্তির কোচিংয়ে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। রদ্রিগো, মিলিতাও, কাসেমিরোরাও তার চেনা সৈনিক।
আর যদি চোটমুক্ত থাকেন, নেইমারও হয়তো ফিরবেন—শেষবারের মতো জ্বলে উঠতে বিশ্বকাপে।
২০২৬: ব্রাজিলের ভাগ্যপরীক্ষা
২০২৬ বিশ্বকাপ হবে আনচেলত্তির ব্রাজিল অধ্যায়ের প্রথম ও সম্ভবত শেষ বড় পরীক্ষা। তিনি যদি পারেন ভেঙে পড়া আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে, আর ইউরোপিয়ান দলগুলোর বিরুদ্ধে সেই বহুদিনের ‘অভিশাপ’ ভাঙতে—তবে ইতিহাস আবার ব্রাজিলের পক্ষে লেখা হতে পারে।
আনচেলত্তিই ব্রাজিলের আশার আলো
আনচেলত্তি শুধুই একজন কোচ নন, তিনি ব্রাজিলের ফুটবলে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের প্রতীক। তাকে দিয়ে ব্রাজিল শুধুমাত্র জিততে চায় না, তারা নিজেদের নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতেও চায়। হয়তো এইবার, কাঠামোর ভেতরে সৌন্দর্যের জন্ম হবে। আর ব্রাজিল আবার ফুটবল বিশ্বে ফিরে পাবে তার হারানো রাজত্ব।
এমএইচএম