‘সঠিকভাবে ব্যবহার করলে, সে বিশ্বের সেরা ফুটবলার হতে পারে। ’ এই সাহসী মন্তব্য করেছিলেন বার্সেলোনার সাবেক কোচ জাভি, ২০২১ সালে।
২০১৭ সালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ১৩৫.৫ মিলিয়ন পাউন্ডে বার্সায় যোগ দিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় দামী খেলোয়াড় হওয়ার পরও তিনি ইনজুরি, অনিয়ম আর বাজে আচরণের কারণে বারবার সমালোচিত হয়েছেন।
কিন্তু সেই ভবিষ্যদ্বাণী অবশেষে বাস্তব হলো। ২৮ বছর বয়সে এসে তিনি জিতলেন কাঙ্ক্ষিত ব্যালন ডি’অর। পুরস্কার হাতে নিয়ে পরিবারের ত্যাগের কথা বলতে গিয়ে দেম্বেলের চোখে অশ্রু, যা তার দীর্ঘ সংগ্রামের সাক্ষী।
স্বপ্নের মৌসুম
২০২৪–২৫ মৌসুমে দেম্বেলের বিস্ফোরণ ঘটেছিল। প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)-র হয়ে তিনি এক মৌসুমেই লিগ ওয়ান, ফরাসি কাপ এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলেন। শুধু তাই নয়, ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালেও পৌঁছায় দল। সব মিলিয়ে তার অবদান ছিল ৩৫ গোল ও ১৪ অ্যাসিস্ট, যা ক্যারিয়ারের সেরা। মৌসুমের শুরুটা নীরব থাকলেও নতুন বছরের পরিসংখ্যান বলছে, ইউরোপের সবচেয়ে ফর্মে থাকা ফরোয়ার্ড ছিলেন দেম্বেলে।
এ অর্জন সহজে আসেনি। প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মোহামেদ সালাহ, কিলিয়ান এমবাপ্পে, লামিনে ইয়ামাল কিংবা রাফিনহার মতো তারকারা। কিন্তু দেম্বেলে সবার ওপরে উঠে প্রমাণ করেছেন নিজের জায়গা।
এমবাপ্পে বিদায়ের পর নতুন নেতা
২০২৩ সালের আগস্টে মাত্র ৪৩.৫ মিলিয়ন পাউন্ডে দেম্বেলেকে কিনে আনে পিএসজি। প্রথম মৌসুমেই তিনি ৬ গোল আর ১৪ অ্যাসিস্ট করেন। তবে তখনও দলের প্রধান ভরসা ছিলেন এমবাপ্পে, যিনি ৪৪ গোল করেছিলেন।
এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতেই বদলে যায় সমীকরণ। নতুন নেতৃত্ব দরকার ছিল পিএসজির। তখনই সামনে আসেন দেম্বেলে। তার অবদান দাঁড়ায় ৫১ গোলে অবডান—যা তার আগের সেরা মৌসুমের দ্বিগুণ।
কোচ লুইস এনরিকে তাকে স্পষ্ট বার্তা দেন, ‘আমাদের এখন তোমার কাছ থেকে গোল চাই, চাই তুমি স্বার্থপর হও। ’
কোচিং স্টাফরাও একটানা তাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন—‘ব্যালন ডি’অর, ব্যালন ডি’অর। ’
এই আস্থাই বদলে দেয় দেম্বেলেকে। ডান উইং ছেড়ে তিনি এখন মূলত ফোলস নাইন হিসেবে খেলেন, যেখানে তিনি একদিকে দলের আক্রমণ সাজান, আবার শেষটাও করেন নিজে।
ইনজুরি ও শৃঙ্খলা সমস্যা
বার্সেলোনায় সাত বছরের মধ্যে দেম্বেলে ১৪টি মাংসপেশির ইনজুরিতে ৭৮৪ দিন মাঠের বাইরে ছিলেন। শৃঙ্খলাজনিত কারণে ক্লাব তাকে ব্যক্তিগত শেফ নিয়োগ করে দেয়, গেম খেলার কারণে দেরিতে অনুশীলনে আসায় জরিমানাও গুনতে হয় সবচেয়ে বেশি।
তবুও তার বিস্ফোরক গতি আর ড্রিবলিং সবসময়ই মনে করিয়ে দিতেন, ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভার কথা।
পরিবর্তনের শুরুটা হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। মরক্কোয় হঠাৎ বিয়ের পর তার ব্যক্তিজীবনে আসে স্থিতি। পরের বছর তিনি বাবা হন। এরপর থেকেই জীবন ও খেলাকে ভিন্নভাবে দেখা শুরু করেন। ব্যক্তিগত ফিজিও, ফ্রান্সে বিশেষায়িত চিকিৎসা, পুষ্টিবিদের সহায়তায় বদলে যায় তার জীবনযাপন।
এমবাপ্পে নয়, দেম্বেলে
অনেকেই ভেবেছিলেন পিএসজির চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে এমবাপ্পেকে ঘিরে। তিনি হবেন বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। ভবিষ্যদ্বাণী ঠিকই হয়েছিল—তবে নায়ক হয়ে উঠলেন দেম্বেলে।
এমএইচএম