বসুন্ধরা কিংস ছেড়ে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবে পাড়ি জমিয়েছেন গোলরক্ষক মিতুল হাসান। বর্তমানে সাইফের হয়ে প্রায়ই সুযোগ পাচ্ছেন একাদশে।
প্রশ্ন- বসুন্ধরা ছেড়ে সাইফে এলেন। কেমন কাটছে মৌসুমটা?
উত্তর- সাইফে আমি ভালো আছি। আলহামদুলিল্লাহ। এখানে আমি নিয়মিত একাদশে খেলার সুযোগ পাচ্ছি। এটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। বসুন্ধরা ক্লাব ছেড়েছি শুধুমাত্র খেলার জন্য। সেখানে ফ্যাসিলিটিজের কোনো অভাব ছিল না। শুধুমাত্র দলে সুযোগ না পাওয়ার কারণে বসুন্ধরা ছেড়ে সাইফে যোগ দিয়েছি। কারণ বসুন্ধরার মূল একদশে এবং বেঞ্চে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছে। সেখানে সুযোগ পাওয়াটা বেশ চ্যালেঞ্জের।
প্রশ্ন- এই মৌসুমে আপনার পারফরম্যান্স কেমন ছিল?
উত্তর- আমরা খেলোয়াড়। মাঠে নেমে সব সময়ই সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করি। এখন আমি কতটা দিতে পেরেছি সেটা আমার টিম ম্যানেজমেন্ট, দর্শক আর সাংবাদিকরা বিচার করবেন। আমি নিজের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট।
প্রশ্ন- চলতি মৌসুম শেষের পথে। আগামী মৌসুম নিয়ে কি ভাবছেন?
উত্তর- এখনো ৪টা ম্যাচ বাকি। আমার সমস্ত ফোকাস এখন সামনের ম্যাচগুলোতে। আমি এখন পরিশ্রমী খেলোয়াড়। নিয়মিত অনুশীলন করে নিজেকে ফিট রাখাই আমার মূল দায়িত্ব। আমার মনোযোগ সেদিকেই।
প্রশ্ন- প্রিমিয়ার লিগে আপনার শুরুটা কবে থেকে। এ পর্যন্ত কোন কোন ক্লাবের জার্সিতে খেললেন?
উত্তর- ২০০৫ সালে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ দিয়ে আমার লিগের জার্নি শুরু। ২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আমি আরামবাগের জার্সিতে খেলেছি। ২০১০-১১ সালে ব্রাদার্স ক্লাবে যাই। এরপর লিগামেন্ট ইনজুরিতে পড়ে অনেকটাই সময় মাঠের বাইরে ছিলাম। ওই বছর আমি জাতীয় বয়সভিত্তিক দল অনূর্ধ্ব-২৩ দলে ডাক পাই। দলটি কুয়েতে খেলতে গিয়েছিল এএফসি কাপ। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য দল কুয়েতের যাওয়ার ৭দিন আগে আমার লিগামেন্ট ছিঁদে যায়। দুই বছর বিরতি দিয়ে ২০১৩-১৪ সালে আবারো লিগে ফিরে আসি; পুরনো ক্লাব আরামবাগের হয়ে। এরপর সেখান থেকে আবাহনী লিমিটেডে যোগ দেই। এক মৌসুম পর আবারো আরামবাগ, পরে শেখ জামাল হয়ে বসুন্ধরা কিংসে যাই। কিংসের জার্সিতে তিন মৌসুম খেলে ২০২১-২২ মানে চলমান লিগে সাইফে যোগ দেই।
প্রশ্ন- এতগুলো ক্লাবের জার্সিতে খেললেন। কোন ক্লাবটাকে মনে হয়েছে যে আপনার প্রতিভার যথার্থ মূল্যায়ণ তারা করেছে?
উত্তর- আমরা পেশাদার ফুটবলার। যখন যে ক্লাবে খেলেছি সেখানে পেশাদারিত্ব বজায় রেখেই খেলেছি। এটা সুনির্দিষ্ট করে বলার কিছু নেই যে এই ক্লাব মূল্যায়ণ করেছে সেই ক্লাব করেনি। আসলে সব ক্লাবই পেশাদার। তারা আমার সঙ্গে খেলোয়াড়সূলভই আচরণ করেছে। আমি মনে করি আমার যতটুকু মেধা আছে সেটা ক্লাব বুঝেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি এবং এটা প্রত্যেকটা ক্লাবের কথাই বলব।
প্রশ্ন- ক্যারিয়ারের শুরুটা কোন ক্লাব দিয়ে?
উত্তর- তৃতীয় বিভাগের দল লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব দিয়ে আমার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু। ২০০১ সালে। এরপর মহাখালী একাদশের হয়ে ২০০২-০৩ সালে দ্বিতীয় বিভাগে খেলি। দলটাকে আমার চ্যাম্পিয়ন করে প্রথম বিভাগে তুলে এনেছিলাম সে সময়। এরপর আর কোনো ক্লাবে খেলেনি। ২০০৩-০৪ সালে চলে আসি প্রিমিয়ার লিগে আরামবাগ ক্লাবে। তারও আগে আমি আমার জন্মস্থান যশোরের সদর উপজেলার হাশেমপুরে খেলেছি। আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় আমাদের স্কুল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০০১ সালে। শুরু থেকেই আমি গোলরক্ষক পজিশনে খেলেছি।
প্রশ্ন- কার হাত ধরে ফুটবলে আসা?
উত্তর- আমাদের যশোরের এক বড় ভাই ক্যান্টিন নাম তার ওনি এবং জিল্লুর স্যারের হাত ধরেই ফুটবলে আমার আগমন। স্কুল পর্যায়ে জিল্লুর স্যার আমাকে অনেক উৎসাহ-প্রেরণা দিয়েছিলেন। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসাটা ওনার কারণেই জন্মেছিল। তবে ফুটবলের যত অ আ ক খ- সেসব শিখেছি আমার ওস্তাদ ইমদাদুল হক সাচ্চু স্যারের কাছ থেকে। ওনি আজ পৃথিবীতে নেই; মারা গেছেন। এছাড়া যশোরে যত সিনিয়র বড় ভাইরা আছেন সকলেরই আমাকে কম বেশি সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন।
প্রশ্ন- পরিবারের সার্পোট কেমন পেয়েছেন?
উত্তর- আমার মা সব থেকে বেশি কষ্ট করেছেন। আমাকে ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলতে তার অবদান অনস্বীকার্য। বাবাও অনেক সহযোগিতা করেছেন। শুরুটা করেছেন মা। এর বাইরে বর্তমানে আমার স্ত্রী আমাকে অনেক উৎসাহ-প্রেরণা দেন। বসুন্ধরা কিংসে যখন আমি বসে ছিলাম তখন আমার স্ত্রী প্রায়শই বলতেন তুমি অন্য ক্লাবে চলে যাও যেখানে খেলার সুযোগ পাবে সেখানে যোগ দাও।
প্রশ্ন- ভবিষ্যৎ লক্ষ্যটা?
উত্তর- ২০১৮ সালে সবশেষ জাতীয় দলে সুযোগ পাই। এর আগেও সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু সেরা একাদশে কখনো সুযোগ হয়নি। ভবিষ্যতে আমার একটাই লক্ষ্য জাতীয় দলে খেলার। এর বাইরে ক্লাব ভিত্তিক ফুটবলে আরো তিন-চার মৌসুম খেলতে চাই।
বাংলাদেশ সময়:১২২৭ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২২
এআর