ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফ্রান্স

প্যারিস থেকে রহমান মাসুদ

বাতাক্লঁয়ে প্রতিদিনই আসছে মানুষ

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
বাতাক্লঁয়ে প্রতিদিনই আসছে মানুষ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাতাক্লঁ, প্যারিস, ফ্রান্স: গত ১৩ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে যেসব স্থানে জঙ্গি হামলা হয়, তার মধ্যে অন্যতম রিপাবলিক স্কয়ারের পাশের থিয়েটার হল বাতাক্ল‍ঁ। মার্কিন ব্যান্ড দল ঈগলস অব ডেথ মেটালের কনসার্ট দেখতে সেদিন এখানে জড়ো হয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ।

হামলায় নিহত হন ৮৭ জন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ হামলাই ফ্রান্সে সবচেয়ে ভয়াবহ। এর ফলে বদলে গেছে পুরো ইউরোপের হিসেব-নিকাশ।

ঘটনার পর এক মাস পেরিয়ে গেলেও এই সন্ত্রাসী হামলাকে ভোলেনি প্যারিসবাসী। প্রতিদিনই শত শত মানুষ বাতাক্লঁয়ে আসেন। কারোর হাতে থাকে ফুল, কারোর হাতে ফল, কেউবা মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন, আবার কেউ প্লেকার্ড হাতে স্মরণ করেন নিহতদের।

এতোদিন পরও এখানের পরিবেশ থমথমে। চারদিকে পুলিশি নজরদারী। ভাবগম্ভীর পরিবেশে মৌন বদনে ঘটনাস্থলের সামনে দাড়িয়ে থাকেন আগতরা।

ঘটনাস্থল এখনো ঘিরে রেখেছে পুলিশ। শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা তাদেরই তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
কেবল ঘটনাস্থলই নয়, থিয়েটার হল বা সিটি সেন্টারের কাছের পার্কের সামনেও জমেছে ফুল আর মোমবাতির স্তুপ। নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়োর ভালোবাসায় সিক্ত ১৩ নভেম্বরের নিহতরা।

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেওয়া বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা ও প্রতিনিধিরাও শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে এসেছেন বাতাক্লঁয়ে।

হামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে ফরাসী তরুণ জ্যঁসোয়া মিন্টসা বাংলানিউজকে বলেন, এ ক্ষত মুছবে না কোনোদিনই। আমরা আমাদের নিহত বন্ধুদেরও কোনোদিন ভুলব না। তারা জীবন দিয়ে ফরাসি জাতিকে একতাবদ্ধ করে গেছেন।

আর তিউনিশিয়ান বংশদ্ভুত ইব্রাহীম জানালেন, সন্ত্রাসীরা বিশ্বের কাছে মুসলিমদের সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত করছে। কিন্তু ফরাসিরা বুঝেছে, ওরা মুসলিম নয়, ওরা মানবতার শত্রু। ওরা সন্ত্রাসী।

বাংলাদেশি তরুণ মামুন বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, হামলায় প্যারিসে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেওয়া অতিথিরা সে স্থবিরতা কাটাতে সহায়তা করেছেন। তারা চলে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে প্যারিস। তবে পুরো স্বাভাবিক হতে হয়তো আরও অনেক সময় লাগবে।

সেদিন বাতাক্লঁ ছাড়াও প্যারিস ও এর আশেপাশের আরও পাঁচ জায়গায় হামলার ঘটনা ঘটে। এসব স্থানে সন্ত্রাসীদের বোমা ও গুলিতে মারা যান আরও ৪০ জনের মতো।

বাতাক্ল‍ঁয়ে গুলির ঘটনার প্রায় একই সময় স্তেদে দ্য ফ্রান্স স্টেডিয়ামের বাইরে বোমাহামলা হয়। ওই সময় স্টেডিয়ামে চলছিল জার্মানি ও ফ্রান্সের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। খেলা দেখতে গিয়েছিলেন খোদ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্র্যঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমেয়ার।

বলা হচ্ছে, ২০০৪ সালে মাদ্রিদে ট্রেনে বোমা হামলার পর ইউরোপে এটাই সন্ত্রাসী হামলার সবচেয়ে বড় ঘটনা। প্যারিসে বিদ্রুপ ম্যাগাজিন শার্লি হেবদোতে হামলা চালিয়ে ২০ জনকে হত্যার ১০ মাসের মাথায় হলো এ হামলা। বাতাক্লঁর কাছেই এই শার্লি হেবদোর কার্যালয়।

এই ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞের সময় জঙ্গিরা বাতাক্লঁয়ে শতাধিক মানুষকে জিম্মি করে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে জিম্মি সংকটের অবসান ঘটালেও তার আগেই ঝরে যায় ৮৭টি তাজা প্রাণ। ওই অভিযানে হামলাকারীরাও নিহত হয়।

হামলার পর বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এই পর্যটন নগরীর সব বাসিন্দাকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। জরুরি অবস্থা জারির পাশাপাশি শহরে নামানো হয় দেড় হাজার সেনা, বাতিল করা হয় পুলিশের ছুটি। হাসপাতালগুলোয় কর্মীদের নিরবচ্ছিন্ন কাজে রাখা হয়।  

মেট্রো রেলের পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে দূরপাল্লার রেল ও বিমান চলাচল চালু রাখা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
আরএম/আরএইচ

** চুক্তি সই, সন্তুষ্ট বাংলাদেশ!
** চুক্তিতে একমত হওয়ার আহ্বান মুনের
** কপ-এ উত্তেজনা, উপেক্ষিত বাংলাদেশ
** ১০ হাজার সংবাদকর্মীর মিডিয়া রুম
** কপ-২১ সম্মেলনের সফলতা নিয়ে ধোঁয়াশা
** বাংলানিউজের মাসুদ এখন প্যারিসে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।