ঢাকা: শিশুর মাতৃদুগ্ধ পানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাতীয় বেস্টফিডিং কমিটি কার্যকর না হওয়াকে চিহ্নিত করেছে আর্ন্তজাতিক সংস্থা ডাব্লিউবিটিআই (বিশ্ব মাতৃদুগ্ধপানের প্রবণতা)।
একইসঙ্গে জানানো হয়, ২০০৮ সালের তুলনায় ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার ৪৩ শতাংশ থেকে ৬৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
মঙ্গলবার আইসিডিডিআর’বির সাসাকাওয়া মিলনায়তনে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধপানের প্রবণতা-২০১২’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।
সেমিনারে ‘দেশে শিশুর খাবারের অবস্থার প্রতিবেদন (ডাব্লিউবিটিআই কান্ট্রি রিপোটে)’ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ড. এস কে রায়।
দেশে শিশুর খাবারের অবস্থার প্রতিবেদনে (ডাব্লিউবিটিআই কান্ট্রি রিপোর্টে) জানানো হয়, মাতৃদুগ্ধ পানের প্রবণতায় বাংলাদেশ আগের তুলনায় একধাপ এগিয়েছে। দেশে বর্তমানে মাতৃবান্ধব হাসপাতাল রয়েছে। শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার ৪৩ শতাংশ থেকে ৬৪ শতাংশ বেড়েছে গত ৪ বছরে। এছাড়াও ২০১১ সালের বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভে অনুযায়ী শিশুপুষ্টির হার বেড়েছে। শিশু মৃত্যুহার কমেছে।
তবে ২০১২ সালের পর্যালোচনায় বাংলাদেশে ডাব্লিউবিটিআই এ উন্নতির বাধা হিসেবে বলা হয়েছে, জাতীয় ব্রেস্টফিডিং কমিটি কার্যকর না হওয়া, বেসরকারি কর্মস্থলে মাতৃত্বকালীন ছুটি বেতনসহ ৬ মাসে উন্নীত না করা, সরকারি ও বেসরকারি শিশুদিবাযত্ন কেন্দ্র ও কর্মকালীন সময়ে বুকের দুধ খাওয়ানের জন্যে কর্মবিরতির উপযুক্ত ব্যাবস্থা না থাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এছাড়াও আইওয়াইচিএফ’র (ইনফ্যান্ট ইয়াং চাইল্ড ফিডিং) ওপর স্বাস্থ্যকর্মী ও পুষ্টিবিদদের সঠিক প্রশিক্ষণের অভাব, সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের মা সহায়ক দল (মাদার সাপোর্ট গ্রুপ) কার্যক্রমের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব ও হাসপাতাল এবং মার্কেটগুলোতে মায়ের দুধের বিকল্প শিশুখাদ্য বিপণন আইন ভঙ্গের ওপর নিয়মিত মনিটরিং সিস্টেমের অভাবকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ডাব্লিউবিটিআই এর কাঙিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বাধা হিসেবে আইওয়াইসিএফ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বরাদ্দ অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ও পরিমাপের কোনো নির্দেশক না থাকাকে দায়ী করা হয়েছে।
২০১২ সালের পর্যালোচনায় বাংলাদেশে ডাব্লিউবিটিআই এর উন্নতীর জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, দেশব্যাপী মায়ের দুধের প্রচার, সংরক্ষণ, সমর্থন বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, জাতীয় ব্রেস্টফিডিং কমিটির কার্যক্রম বাড়ানো, আইওয়াইসিএফ এর কার্য পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।
এছাড়াও মায়ের দুধের বিকল্প শিশু খাদ্য বিপণন আইনের ওপর দেশের সব হাসপাতাল, মার্কেট, ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বার ইত্যাদি জায়গায় নিয়মিত মনিটরিং সিস্টেম চালু করা ও সংবাদপত্র-টেলিভিশনের মাধ্যমে বিএমএস কোড সর্ম্পকে জানানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
শিশুবান্ধব হাসপাতালে মনিটরিং সিস্টেম চালু করা, আইওয়াইচিএফ এর ওপর স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়মিত প্রশিকক্ষণ, প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ব্রেস্টফিডিং কর্নার প্রতিষ্ঠা, দেশের সব জায়গায় মা সহায়ক দল গঠন ও জরুরি অবস্থায় শিশুখাদ্য বিতরণের জন্য কর্মকর্তাদের সঠিক প্রশিক্ষণের সুপারিশ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, শিশুর মাতৃদুগ্ধ পানে বাংলাদেশের সাফল্য ভালো। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মাতৃদুগ্ধ পানের সচেতনতা মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।
কর্মজীবি মায়েদের কাছে শিশুদের রাখতে পারলে ও ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপন বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশ সূচকে আরও এগোতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপচিালক এ কে এম আমির হোসেন, বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম কিউ কে তালুকদার, জাতীয় পুষ্টি সেবা’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. একলাসুর রহমান, বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের সম্পাদক অধ্যাপক ড. সুফিয়া খাতুন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ আগস্ট ২০১২
এমএন/সম্পাদনা: রোকনুল ইসলাম কাফী, নিউজরুম এডিটর