ঢাকা, রবিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ জুলাই ২০২৫, ০১ সফর ১৪৪৭

স্বাস্থ্য

হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মা ও শিশুর মৃত্যু, কর্তৃপক্ষের দায় স্বীকার

মিরাজ মাহবুব ইফতি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৪৮, জুলাই ২৬, ২০২৫
হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মা ও শিশুর মৃত্যু, কর্তৃপক্ষের দায় স্বীকার স্বামীর সঙ্গে আইরিন পারভিন।

ঢাকা: রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরের এক হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার কারণে এক সন্তানসম্ভবা নারী ও তার অনাগত সন্তানের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী মোছা. আইরিন পারভিন, (ডেথ সার্টিফিকেট নম্বর: ২৫০৭২৪০১৩), কেবিন নং ৬০৩-এ ভর্তি ছিলেন।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরের ডক্টর আজমল হসপিটালে ভুক্তভোগী মারা যান।  

পরিবারের দাবি অনুযায়ী, ২৫ জুলাই সকাল ৭টা ২২ মিনিটে তিনি স্বাভাবিকভাবে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। তবে মাত্র ১৮ মিনিট পর, সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে তিনি এবং তার গর্ভের সন্তান মৃত্যুবরণ করেন।  

পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, ভুলভাবে স্যালাইন ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের কারণে রোগীর গ্লুকোজ লেভেল হঠাৎ বেড়ে যায় এবং শরীর ঠাণ্ডা ও নীল হয়ে পড়ে। এরপর তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না দিয়ে, দায়িত্বরত নার্স, ডাক্তার ও এনেসথেশিয়ার কর্মীরা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। মরদেহটি হাসপাতালের আইসিইউয়ের বাইরে রেখে দেওয়া হয় এবং গর্ভস্থ শিশুটির কোনো চেকআপ করা হয়নি।

প্রথমদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করে। তবে পরে পরিবারের চাপ ও পুলিশের উপস্থিতিতে হাসপাতালের পরিচালক মীর আজাহার আলী দায় স্বীকার করেন এবং লিখিতভাবে জানান, চিকিৎসায় অবহেলার কারণে এ মৃত্যু ঘটেছে।

পরিচালক মীর আজাহার আলী বলেন, আমি আমার হাসপাতালে কোয়ালিফাইড নার্স ছাড়া পরিচালনা করছি। রোগীর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স, ডিউটি ডাক্তার ও অ্যানেসথেসিয়া টিম কেউই তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। তাদের ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার জন্য মোছা. আইরিন পারভিন ও তার গর্ভের সন্তান মারা গেছেন। আমরা ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সতর্ক থাকব এবং রেজিস্টার্ড নার্স ও ডাক্তার নিয়োগ দেব। এর ব্যতিক্রম হলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সবাই স্বাধীন থাকবেন। আমরা এ মৃত্যুর জন্য দায়ী ও গভীরভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।

মৃত নারীর স্বামী মামলা না করার সিদ্ধান্ত নেন, তবে পরিবার দাবি করেছে, হাসপাতালটির বিরুদ্ধে এর আগেও ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগীর দেবর সাখাওয়াত হোসেন সিয়াম বাংলানিউজকে বলেন, আমার ভাবি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তার সিজারে বাচ্চা হওয়ার কথা ছিল। আমার ভাই-ভাবির চার বছরের একটা বাচ্চা আছে। আগে বাচ্চা যেই ডাক্তারকে দেখিয়ে ছিলেন, সে ডাক্তার এ হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন। বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আমার ভাবিকে। শুক্রবার সকাল ৭টা ২২ মিনিটের দিকে ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়।  এর পরপর ভাবিকে ক্যানোলা পরানো হয়। ক্যানোলা পরানো পর থেকে ভাবির বুকে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। নার্সকে ক্যানোলা খুলে ফেলার কথা বলেন আমার ভাবি, তবে সে খুলেনি। এরপর পরে ভাবির হাত-পা নীল হয়ে যায়, ভাবিকে ৭টা ৪০ মিনিটে মৃত ঘোষণা করে ডিউটিরত ডাক্তার।  

সিয়াম অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাবি মারা যাওয়ার পর, এখানে ডাক্তার পরীক্ষা করেনি পেটের বাচ্চা জীবিত আছে কিনা। এ ঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আইনি পদক্ষেপ নিলে ভাবীর ময়নাতদন্ত করতে হতো এ কারণে পরিবারের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেই আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লিখিত দিয়ে তাদের ভুল স্বীকার করেছেন। এ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনা আগেও ঘটেছে। এ ঘটনা নতুন নয়। আমাদের পরিবারের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটলো, এমন ঘটনা যেন আর কোনো পরিবারে সঙ্গে না ঘটে।

এমএমআই/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।