ঢাকা, বুধবার, ১২ ভাদ্র ১৪৩২, ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

স্বাস্থ্য

বন্ধ্যাত্বের চিকি‍ৎসা মানেই কি টেস্ট টিউব? 

স্বাস্থ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:৩৭, আগস্ট ২৭, ২০২৫
বন্ধ্যাত্বের চিকি‍ৎসা মানেই কি টেস্ট টিউব?  সংগৃহীত ছবি

বাবা মা একটি ফুটফুটে ছোট্ট শিশু মিলেই হাসি-খুশি ভরা পরিবার। বিয়ের এক, দুই বা তিন বছর পরেও যখন পরিবারে নতুন অতিথি আসছে না তখন স্বামী-স্ত্রীসহ তাদের দুই পরিবারের সবাই বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।


 
তবে এমন পরিস্থিতিতে আমাদের মাঝে তৈরি হয় নানা আশঙ্কা।  তা হলে এই সমস্যার আসলে কী সমাধান? বিস্তারিত জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ মারুফ সিদ্দিকি।  

অনেক নিঃসন্তান দম্পতির মাঝে একটা প্রচলিত ধারণা আছে যে যেহেতু তাদের অনেকদিন হলো বাচ্চা হচ্ছে না, কাজেই তাদেরকে টেস্ট টিউব চিকি‍ৎসায় যেতে হবে। প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটি মোটেও সেরকম নয়।  

একটা বড় অংশ পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম এর রোগী এবং এরা অধিকাংশ নিয়ম অনুযায়ী সঠিক চিকি‍ৎসা পায় না। এরা অনেকেই সঠিক চিকিৎসা পেলে বন্ধাত্বের নয়, দশ বছর পর ও গর্ভধারণ করে। সাধারণত, এই ধরনের রোগীদের জন্য ওষুধপত্র ব্যতীত গর্ভধারণ করা কঠিন। সুখবর হচ্ছে, এই রোগীদেরকে যদি ওভুলেসান ঘটানোর ওষুধ সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং এর ফলাফল ট্রান্সভ্যাজাইনাল সনোগ্রাফির মাধ্যমে অব্যাহতভাবে পর্যায়ক্রমে পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় চিকি‍ৎসা দেয়া হয়, তবে তাদের গর্ভধারণের হার খুবই সন্তোষজনক হয়।
যাদের এক বা উভয় টিউব বন্ধ থাকে, তাদের অনেকেরই লাপারস্কপি অপারেশনের মাধ্যমে টিউব খোলা যেতে পারে।

যাদের জরায়ুতে টিউমার থাকে অথবা ওভারিতে চকলেট সিস্ট অথবা অন্য কোনো টিউমার থাকে, তাদেরকেও অপারেশন করে টিউমার বা সিস্ট অপসারণের পর অনেকেই গর্ভধারণ করেন।

অনেকে নারী এনওভুলেশনে ভোগেন অর্থাৎ তাদের ওভারিগুলোতে নিয়মিত ডিম্বানু তৈরি হয় না। এই রোগীদেরকে যদি ওভুলেসান ঘটানোর ওষুধ সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং এর ফলাফল ট্রান্সভ্যাজাইনাল সনোগ্রাফির মাধ্যমে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ওষুধের মাত্রা

ঠিক করে দেয়া যায়, তবে তাদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক রোগী গর্ভধারণ করেন। বীর্যের কিছু কিছু সমস্যা শুধুমাত্র ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভবপর হয় না। সেই ক্ষেত্রে, রোগীকে ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেসান (IUI) -এর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।

সাধারণত, চিকি‍ৎসার সব রকম প্রোটোকল শেষ হওয়ার পর রোগীকে “ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেসান”(I.V.F/ টেস্ট টিউব বেবি)-এর পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু, এ্যাজোস্পারমিয়া (বীর্যে কোনো শুক্রাণু বা স্পারমেটোজোয়া না পাওয়া), গুরুতর অলিগোএ্যাসথেনোস্পারমিয়া (শুক্রাণুর সংখ্যা ও সক্রিয়তা এতই কম যে, আই.ইউ.আই করে লাভ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না), উভয় ফ্যালোপিয়ান টিউব বন্ধ থাকলে বা ব্যাপক এন্ডোমিট্রিওসিস-এর মতো সমস্যা থাকলে (যখন দুটি টিউব খোলা আছে ঠিকই, কিন্তু, এই খোলা টিউবগুলো ডিম্বাণুটিকে পিক-আপ করতে পারে না, মানে একে টিউবের ভেতরে ঢোকাতে পারে না), তখন প্রথম সাক্ষাতেই আই.ভি.এফ-কেই একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।

অবশ্য, এই বিশেষ অবস্থাগুলো খুব কম সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। সৌভাগ্যজনকভাবে, বর্তমানে বাংলাদেশেই এই সব ধরনের চিকিত্সা সুবিধা রয়েছে।  

যারা এমন সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন, তারা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে না দিয়ে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।  
আর একটি বিষয়, বাচ্চা না হওয়ার জন্য আমরা প্রথমেই নারীটির দিকে আঙ্গুল তুলি। মনে রাখতে হবে একজন নারীর পূর্ণতা আসে মাতৃত্বে। তাই তার যদি সন্তান না থাকে তাহলে সেই বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। অযাচিতভাবে এসব প্রসঙ্গ তুলে তাকে বিব্রত না করাই উচিৎ।  

Dr. Maruf Siddiqui 
OB/GYN and infertility specialists 

লেখাটি পুরোনো, তবে আজও একইভাবে প্রাসঙ্গিক

এসআইএস/এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।