ঢাকা: নোবেল জয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে হবে।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে ৭ম সার্ক ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার বিষয়ক দুই দিনব্যাপী কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমেরিকায় মোবাইলে কিছু স্বাস্থ্যসেবার ফিচার যোগ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও মোবাইলে স্বাস্থ্য প্রযুক্তির ফিচার যুক্ত করতে হবে। প্রেসার, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা করার ফিচার মোবাইলে যুক্ত করলে সাধারণ মানুষের কাছে এটি জনপ্রিয় হবে। কারণ, মোবাইল ফোন মানুষের সবার নিত্যদিনের সঙ্গীতে পরিণত হয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, স্বাস্থ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, গবেষকসহ সাধারণ মানুষকেও কাজ করতে হবে।
স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা বিশ্বব্যাপী একটি চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এটি আরও বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, এখানে কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেই। ক্যান্সার বিষয়ে সব ধরনের সেবা ও গবেষণার অভাব রয়েছে।
সাধারণ মানুষকে ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া সব সময় সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে সবার কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে হবে। ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবার মূল্য কমাতে হবে। সামাজিক ব্যবসায় সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে এর সফলতা সম্ভব।
নিজের গড়া নোবেল জয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের কথা উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে রাতকানা রোগের এক সময় খুবই প্রকোপ ছিলো। কিন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্যোগে চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ এখন নির্মুল প্রায়। গ্রামীণ ব্যাংক স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানিসেবাসহ অনেক স্বাস্থ্যসেবাকে গ্রামে পৌঁছে দিয়েছে।
ক্যান্সার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘এ কনফারেন্সে ক্যান্সার সম্পর্কে অনেকেই অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। অনকোলজির প্রতিষ্ঠাতা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ড. করিমের সঙ্গে আমার পরিচয় ৯০ এর দশকে। তার অভিজ্ঞতা আমাকে অভিভূত করেছিলো। আমি আপনাদের সঙ্গে থাকবো। ’’
সার্ক ফেডারেশন অব অনকোলজিস্টের প্রেসিডেন্ট ডা. এম এ হাইয়ের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত আইনজীবী ও ক্যান্সার রোগী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, অনকোলজি ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. হাফিজুর রহমান, অনকোলজি ক্লাবের মহাসচিব ডা. এ এম এম শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
শুক্রবার ও শনিবার এই কনফারেন্স চলবে। দেশি-বিদেশি খ্যাতনামা চিকিৎসকরা এতে উপস্থিত থাকবেন।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের আঞ্চলিক ফোরাম ‘সার্ক ফেডারেশন অব অনকোলজিস্ট’-এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের অনকোলজি ক্লাব, বাংলাদেশ এ কনফারেন্সের আয়োজন করেছে।
দুই দিনব্যাপী এ কনফারেন্সে সার্কভুক্ত দেশ ও আমেরিকা, জার্মানি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশের ৫০ জন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। কনফারেন্স বাংলাদেশি, বিদেশি ও অন্যান্য চিকিৎসকসহ মোট প্রায় ৭০০ জন চিকিৎসক অংশগ্রহণ করছেন।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এই বৃহত্তম কনফারেন্স বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতিপূর্বে ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানে অনুষ্ঠিত হয়।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, ‘‘আমি নিজে ক্যান্সার আক্রান্ত। কিন্ত আমাকে চিকিৎসা করতে হয়েছে লন্ডনে। এখন দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার আধুনিক সব সুবিধা আছে। আহছানিয়া মিশন, ডেল্টা ও সরকারি ক্যান্সার হাসপাতাল আছে। তাই হতাশার কিছু নেই। ক্যান্সারকে জয় করতে হবে। ’’
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১২
এমআইআর/ সম্পাদনা: বেনু সূত্রধর,নিউজরুম এডিটর ও অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর