ফরিদপুর: ফরিদপুর যক্ষ্মা হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো না থাকায় হাসপাতালটিরই চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন ফরিদপুরবাসী।
এক সময় যক্ষ্মা রোগ নিয়ে মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করলেও নিয়মিত চিকিৎসায় রোগটি ভালো হওয়ায় এখন আর সেই আতঙ্ক নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে যক্ষ্মা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। নেই রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ। আর হাসপাতালে রোগী আনা নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও নেই।
হাসপাতালটি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হলেও রোগী ভর্তি ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র ১০ জনের। হাসপাতালটির করুণ অবস্থার পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ডোমেইন’র কারণে হাসপাতালে রোগী আসেন না বলে জানালেন হাসপাতাল কর্মকর্তা সৌমিত্র মজুমদার।
এছাড়া বহুদিন ধরে হাসপাতালের জুনিয়র কলসালটেন্টের পদটিও শূন্য রয়েছে। তিন বছরের বেশি সময় ধরে বাক্সবন্দী পরে আছে এক্স-রে মেশিন। যন্ত্রটি পরিচালনার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী কাজ না করে মাসের পর মাস বেতন তুলছেন।
হাসপাতালের জন্য আনা ৬০ লক্ষ টাকার রির্চাজেবল জেনারেটর ও চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত মূল্যবান যন্ত্রপাতি রয়েছে অরক্ষিত। প্রহরী না থাকায় দিনে গরু-ছাগলের অবাধ চারণভূমির পাশাপাশি জুয়াখেলা ও গাঁজা সেবনের নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে হাসপাতাল প্রাঙ্গন।
এ রকম বহু সমস্যা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বৃহত্তর ফরিদপুরের একমাত্র যক্ষ্মা হাসপাতাল।
অভিযোগ রয়েছে, কর্তৃপক্ষের খাম খেয়ালি ও অব্যবস্থাপনার কারণেই দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সঠিকভাবে পরিচালনার অভাবে হাসপাতালটি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
যক্ষ্মা হাসপাতাল নামে পরিচিত ফরিদপুর বক্ষব্যাধি ক্লিনিক ও বক্ষব্যাধি হাসপাতাল স্থাপিত হয় ১৯৬১ সালে। শহরতলির টেপাখোলায় ৫ একর জমির ওপর নির্মিত হয় এ হাসপাতাল।
হাসপাতালের চিকিৎসক মনিরা জানান, রোগীর যক্ষ্মা হয়েছে কিনা তা জানতে কফ, রক্ত ও এমটি পরীক্ষা করতে হয়, করতে হয় বুকের এক্স-রে। কিন্তু হাসপাতালে কফ পরীক্ষা ছাড়া অন্য পরীক্ষাগুলোর কোনো ব্যবস্থা নেই।
তিনি আরও জানান, এখানে একটি অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন রয়েছে। এটি চালানোর জন্য নুরুল ইসলাম নামে একজন টেকনিশিয়ানও রয়েছেন। কিন্তু শুধুমাত্র ভোল্টেজ সমস্যার কারণে বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে আছে যন্ত্রটি।
তাছাড়া হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় রোগীদের। যক্ষ্মা রোগীদের হাসপাতাল থেকেই ফ্রি ওষুধ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সব ওষুধ দেওয়া হয় না। ফলে রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। কিন্তু হাসপাতালের আশপাশে এ রোগের ওষুধের কোনো দোকান নেই। তাই ওষুধের জন্য রোগী ও তাদের স্বজনদের যেতে হয় শহরে।
রোগীদের অভিযোগ, শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন অতন্ত একবার রোগী দেখার কথা থাকলেও বেশির ভাগ সময়ই দায়িত্বে ফাঁকি দেন চিকিৎসকরা।
টেপাখোলা ও এর আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ ছাড়া এখানে তেমন কেউই চিকিৎসা নিতে আসেন না। অথচ প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে হাসপাতাল পরিচালনার নামে।
এদিকে হাসপাতালে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করেন যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে হাসপাতালে সেবার মান বাড়ালে অনেক বেশি রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসতো।
স্থানীয় কলেজ ছাত্র আসাদ হোসেন জানান, হাসপাতালটি এখন জুয়াড়িদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। সকাল-সন্ধ্যা হাসপাতাল চত্বরে জুয়ার আসর বসে।
এ বিষয়ে হাসপাতাল প্রধান ফরিদপুরের সিভিল সার্জন সিরাজুল হক তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, ডোমেইন এনজিওর মাধ্যমে যক্ষ্মা নিরাময়ে সরকারি কর্মসূচি মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গেছে, এ কারণে হাসপাতালে তেমন রোগী আসেন না।
তবে হাসপাতালে বিদ্যমান সমস্যার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, একাধিকবার উর্ধ্বতন মহলে যোগাযোগ করেও প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না বলে এক্সরে মেশিন পড়ে আছে।
তাদের দাবি হাসপাতালটিতে রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন আধুনিকায়ন। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগের দাবিও জানান তারা।
এছাড়া হাসপাতালে চলমান সমস্যা শিগগিরই সমাধান করে হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৩
সম্পাদনা: জনি সাহা, নিউজরুম এডিটর