ঢাকা: প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত ‘অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট (এপিআই) শিল্প পার্ক’ প্রকল্পের ব্যয় ও প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা বাড়ানো হচ্ছে।
প্রথম সংশোধিত প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে পিইসি সভায় উপস্থিত ছিলেন শিল্প ও শক্তি বিভাগের যুগ্ম প্রধান ফিরোজা বেগম, উপ-প্রধান আসপিয়া আক্তার, প্রকল্প পরিচালক আবদুল বাছেতসহ সংশ্লিষ্টরা।
প্রস্তাবিত ২য় সংশোধিত প্রকল্পের ৩৩১ কোটি ৮৬ লাখ টাকার মধ্যে ২৫১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা দেবে সরকার এবং বাকি ৮০ কোটি টাকা দেবেন উদ্যোক্তারা।
ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ান হয়েছে। প্রথম সংশোধিত প্রকল্পের মেয়াদ ছিল জানুয়ারি ২০০৮ থেকে ডিসেম্বর ২০১২ সাল পর্যন্ত। পিইসি সভায় সেখান থেকে প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০১৫ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য: প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য উদ্যোক্তাদের অবকাঠামোগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল তথা ‘অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট’ শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে ওষুধ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন।
ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্ব: প্রকল্পে ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রায় ০৯-০৮-২০১০ তারিখ পর্যন্ত ১৯৭ দশমিক ৫৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। নানা ধরণের আইনি জটিলতার কারণে ২ দশমিক ৪৪ এর ভূমি এখনও গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
প্রকল্পের মেয়াদ: ভূমি উন্নয়ন সম্পূর্ণ সম্পাদিত হওয়ার পর রাস্তা নির্মাণ, নর্দমা তৈরি, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপন, গ্যাস লাইন, বিদ্যুত লাইন, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট (সিইটিপি) স্থাপন, ইনসিনারেটর নির্মাণ ইত্যাদি কাজ সম্পাদন করার জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। পিইসি সভায় বলা হয় প্রকল্পের অবকাঠামো কাজ শেষ করতে হলে আরো সময় দরকার।
প্রকল্পের নতুন অঙ্গ সংযোজন: প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহের জন্য ১২ কি:মি: ৩৩ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন ও ২টি রিভার ক্রসিং টাওয়ার নির্মাণের নতুন অঙ্গ সংযোজন করার প্রস্তাব করা হয়।
এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান লুৎফর রহমান তরফদার জানান,বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে পেটেন্ড ড্রাগ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রয়েলিটি প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে ক্রমবিকাশমান ওষুধ শিল্পকে প্রতিযোগিতা সক্ষম করার জন্য ৯০ ভাগ আমদানিকৃত কাঁচামাল দেশে উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটির মান আরো উন্নত করার জন্য সময় ও ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে এই প্রকল্পটি নিয়ে নানা ধরনের গড়িমসি চলছে বলে জানা গেছে। বিসিক থেকে শিল্প মন্ত্রণালয় হয়ে সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখে প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা থাকলেও তা ঝুলে আছে। বিসিক আশা করছিল সেপ্টেম্বর মাসেই প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হবে।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সংশোধিত প্রকল্পটি এখনও একনেকে উঠেনি। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সেক্টর ভালো বলতে পারবে।
সংশোধিত প্রকল্প প্রসঙ্গে বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক আব্দুল বাছেত বাংলানিউজকে বলেন,‘ব্যয় ও সময় বাড়িয়ে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু নভেম্বর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটি এখনও একনেকে সভায় কেন ওঠেনি তা আমরা বুঝতে পারছি না। ’
উল্লেখ্য, মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া মৌজার দুইশ’ একর জায়গার ওপর বাংলাদেশে এই প্রথম এপিআই শিল্প পার্ক স্থাপিত হতে যাচ্ছে। এই পার্কে মোট ৪২টি শিল্প প্লট তৈরি হবে। যেখানে ২৫ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ৩৩১ কোটি ৮৬ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে ৮০ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি (বিএপিআই)। এই টাকা দিয়ে এপিআই শিল্প পার্কের ওয়াল, গেইট, ইনসিনেরেটর ও ডাম্পিং ইয়ার্ড নিমার্ণ করা হবে। প্রকল্পের জন্য সরকারি তহবিল থেকে ২৫১ কোটি ৮৬ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। এই অর্থ ২০০ একর জমি কেনা, জমি ভরাট, একটি প্রথম শ্রেণীর ফায়ার স্টেশন নির্মাণ, সম্পদ সংগ্রহ, সরবরাহ সেবা, বেতন-ভাতা, মেরামত ও রক্ষাণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় করা হবে।
এপিআই শিল্প পার্কের সুবিধা সমূহ: সকল ধরনের অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধাসহ এপিআই শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হলে বাংলাদেশ বছরে কমপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি করতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৩
এমআইএস/আরআই/আরকে