ঢাকা: এই নবজাতকের অকাল মৃত্যুর দায় কে নেবে, দালাল না ডাক্তার, কেন এই শিশুর এমন মৃত্যু, কারা দায়ী?
কুমিল্লা থেকে রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসে মৃত নবজাতকের লাশ কোলে নিয়ে এভাবেই আহাজারি করে প্রশ্ন ছুঁড়ছিলেন শিশুটির খালা খুকি বেগম। আহাজারি করছিলেন তার সঙ্গে আসা শিশুটির দাদা আবদুল বাতেনও।
শুক্রবার বিকেল ৫টায় ওই নবজাতকের (পুরুষ) জন্ম হয় কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরিপুরের কামাল সার্জন হাসপাতালে। শিশুটির পিতা লিটন (বাহরাইন প্রবাসী) এবং মা রেশমা বেগম কুমিল্লার তিতাস থানার মজিদপুর গ্রামের বাসিন্দা।
নবজাতকের দাদা আবদুল বাতেন ও খালা খুকি বেগম বাংলানিউজকে জানান, গত শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লার দাউকান্দির গৌরিপুরের কামাল সার্জন হাসপাতালে সুস্থভাবে জন্ম নেয় নবজাতক। সেখানকার ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন, মা এবং শিশু দু’জনেই ভালো আছেন।
নবজাতকের দাদা ও খালা জানান, রোববার সকাল ১০টায় সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তাররা হঠাৎ বলে ওঠেন, শিশুটির ঠাণ্ডা লেগেছে এবং ওজন একটু কমে গেছে। ডাক্তারদের পরামর্শে তারা শিশুটির মাকে হাসপাতালে রেখেই শিশুটিকে দ্রুত ঢামেকে নিয়ে আসেন।
আবদুল বাতেন ও খুকি বেগম আরও জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে একটি টিকিট সংগ্রহ করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে ডাক্তার শিশুটিকে নবজাতক ওয়ার্ডে (২১৯) তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে দ্রুত কাঁচের ঘরে রাখার পরামর্শ দেন। তখন দাদা ও খালা দায়িত্বরত আরেক ডাক্তারকে শিশুটিকে কাঁচের ঘরে রাখতে বলেন। কিন্তু ওই ডাক্তার জানান, কোনো কাঁচের ঘর খালি নেই। অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও ডাক্তার কোনো কথা না শুনে তাদের ফিরিয়ে দেন।
কোনো উপায় না দেখে শিশুটিকে নিয়ে ঢামেকের পুলিশ ক্যাম্পের সামনে এসে দাঁড়ান আবদুল বাতেন ও খুকি বেগম।
এখানে দাঁড়ালে লাইলী বেগম, রাশেদা বেগম, পান্নাসহ ৭/৮ জন দালাল তাদের পাশ্ববর্তী একটি ক্লিনিকে চিকিৎসার সেবা দেওয়ার কথা বলে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য টানাটানি করতে থাকেন।
দূর থেকে টানা-হেঁচড়ার দৃশ্য দেখে চ্যানেল টোয়েটিফোর এর মেডিকেল প্রতিনিধি সোহেল রানা এবং বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর মেডিকেল করেসপন্ডেন্ট শিমুল সাংবাদিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে টানা-হেঁচড়ার কারণ জানতে চান। তৎক্ষণাৎ দালালরা শিশুটির দাদা ও খালার হাত ছেড়ে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
আবদুল বাতেন ও খুকি বেগমের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে সাংবাদিক শিমুল ও রানা তাদের নিয়ে ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে যান। সাংবাদিকদের কাছ থেকে বিবরণ শুনে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ শেষে শিশুটিকে দ্রুত কাঁচের ঘরে রাখার জন্য জরুরি বিভাগ থেকে সংগৃহীত টিকিটে লিখিত দেন ঢামেক পরিচালক।
পরিচালক থেকে লিখিত নিয়ে শিশুটিকে জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমানের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ওয়ার্ড মাস্টার শিশুটিকে পরীক্ষা করে বিকেল ৩টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
নবজাতকটির মৃত্যুর পর ঢামেকের সহকারী পরিচালকের (এডি) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ঢামেক পরিচালকের সঙ্গে বসে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘন্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৪/আপডেট ১৭৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬
সম্পাদনা: অনিক তরফদার ও হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর/সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর