ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

কিডনি রোগের স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম চালুর দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৫ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৪
কিডনি রোগের স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম চালুর দাবি

ঢাকা: দ্রুত বর্ধনশীল কিডনি রোগ অচিরেই মহামারী আকার ধারণ করতে পারে গোলটেবিল বৈঠকে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘বয়সের সাথে বাড়ে কিডনী রোগের ঝুঁকি: প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক বিশ্ব কিডনি দিবস-২০১৪ উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।



বৈঠকে বক্তারা এ রোগ প্রতিরোধে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় স্থাপিত কমিনিউটি ক্লিনিক এবং উপজেলা হাসপাতালগুলোতে কিডনি রোগের স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম চালু করার জোর দাবি জানান।

তারা বলেন, দেশে বিদ্যমান কিডনি চিকিৎসা ব্যবস্থা দিয়ে  মোট রোগীর মাত্র ১২ ভাগ চিকিৎসা করা সম্ভব। ফলে, এ রোগে আক্রান্তদের প্রায় ৯০ ভাগই বিনা চিকিৎসায় দুঃসহ যন্ত্রণায় ভোগেন এবং অনেকেই মৃত্যুবরণ করেন।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটিরও বেশি মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচজন অকালে মৃত্যুবরণ করছেন। কিডনি রোগ অত্যন্ত ভয়াবহ এবং এ রোগের চিকিৎসা এতই ব্যয়বহুল যে, এ দেশে শতকরা পাঁচভাগ মানুষেরও সাধ্য নেই এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার।

বক্তারা এ রোগের ভয়াবহতা বিবেচনায় রেখে তা প্রতিরোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য দেশব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বৈঠকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিত্বকারীদের মধ্যে অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ, সভাপতি, কিডনি ফাউন্ডেশন, অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী, উপাচার্য, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, সভাপতি, বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন, আখতার উদ্দিন আহমেদ, মহাপরিচালক বাংলাদেশ বেতার, ব্যবসায়ী নেতা মো. হেলাল উদ্দিন, ভাইস প্রেসিডেন্ট, এফবিসিসিআই, আব্দুল জব্বার, সঙ্গীতশিল্পীসহ চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, ক্রীড়াবিদ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ তার বক্তব্যে বলেন, দেশে বর্তমানে চাহিদার বিপরীতে মাত্র ২ থেকে ৩ ভাগ রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন সম্ভব হয় এবং এ যাবত মাত্র ১,১০০ রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ সংখ্যা বাড়াতে না পারলে অকেজো কিডনি রোগীর সংখ্যা ভয়াবহভাবে বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, আইসিইউতে যে সব রোগী অকালে মৃত্যুবরণ করেন, তাদের আত্মীয়-স্বজনকে বুঝিয়ে তাদের মূল অঙ্গগুলো যেমন কিডনি, হার্ট, লিভার ইত্যাদি অন্যদের শরীরে প্রতিস্থাপন করার ব্যবস্থা করতে পারলে, ভালো ফল পাওয়া যাবে।

তিনি এ সমস্ত উদ্যোগের সরকারি ব্যবস্থাপনায় সম্প্রসারণ এবং বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

প্রকৃত রোগ নির্ণয় না করে ওষুধ খাওয়ার বিষয়ের ভয়াবহতা উল্লেখ করে ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, প্রকৃত রোগ না বুঝে ওষুধ প্রদান, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রোগীদের ওষুধ গ্রহণ এবং উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের কারণে আকস্মিক কিডনি বিকলের মাত্রা ভয়াবহভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এমন কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নেই, যা কিডনির ক্ষতি করে না। কারণ, অ্যান্টিবায়োটিকের হাইপারটেনসিভ ইফেক্ট রয়েছে।

তিনি বলেন, অনেক সময় এ রোগ অবধারিতভাবেই হয়। কারণ, এমন কিছু অসুস্থতা মানুষের তৈরি হয়, যখন উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।

ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিফ কনসালট্যান্ট ও কিডনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ক্যাম্পস-এর সভাপতি ও রেডলাইন হাসপাতাল (প্রা.) লিমিটেডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ এ বৈঠকে কিডনি রোগ ও এর প্রতিরোধের উপায়সহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন, দেশে বর্তমানে মাত্র ২,০০০ ডায়ালাইসিস সেন্টার আছে, যাতে দৈনিক মাত্র ১,২০০ রোগীর ডায়ালাইসিস সম্ভব। অথচ দেশে দৈনিক চাহিদা রয়েছে ৪০,০০০ হাজারেরও বেশি।

তিনি বলেন, যদি যৌবন থেকেই আমরা সুস্থ জীবন প্রণালীর চর্চা করি, তাহলে বৃদ্ধ বয়সেও আমাদের কিডনি ভালো থাকবে, সুস্থ থাকবে। প্রতিরোধ করা যাবে অন্যান্য জীবন সংহারী রোগবালাইও।

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের প্রধান কারণ হলো- ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, গ্লুমারেলো নেফ্রাইটিস, প্রস্রাব প্রবাহে বাধাজনিত রোগ, বয়স্ক পুরুষদের প্রস্টেট বড় হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের নালী সরু হয়ে যাওয়া, বিভিন্ন ধরনের ওষুধের যেমন-তেমন ব্যবহার।

তিনি আরো বলেন, এ ছাড়া যাদের ওজন বেশি, যারা ধূমপান করেন, যারা কম কায়িক পরিশ্রম করেন তাদের মধ্যেও দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের প্রবণতা অনেক বেশি।

কিডনি রোগের প্রতিরোধের বিষয়ে ডা. এম এ সামাদ বলেন, ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগের কারণ ও রোগ শনাক্তকরণ নিশ্চিত করে এ ভয়াবহ রোগের অধিকাংশই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

তিনি বলেন, শতকরা ১৬ থেকে ১৮ ভাগ লোকের মধ্যেই দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ সুপ্ত অবস্থায় বিদ্যমান থাকে, যার শেষ পরিণতি কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ।

তিনি বলেন, দেশে প্রতিবছর ৪০ হাজারেরও বেশি লোক কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অথচ কিডনি রোগের চিকিৎসা এতই ব্যয়বহুল যে, শতকরা ১০ ভাগ লোকের সাধ্য নেই এই ব্যয়ভার বহন করার।

প্রেসিডেন্সি ইউনির্ভাসিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে যে সব কর্মক্ষম ব্যক্তি অক্ষম হয়ে যান কিংবা মারা যান, সে কারণে দেশে, পারিবারিক ও জাতীয়ভাবে বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয়।

এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট হেলাল উদ্দিন বলেন, ফরমালিন কিডনি বিকলের একটি বড় কারণ। ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে ফরমালিন দেয়। তাই,  এফবিসিসিআই নিজেই ফরমালিনমুক্ত আন্দোলন পরিচালনা করছে।  

গোলটেবিল বৈঠকে অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, দেশের ৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে কিডনি স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা সংযুক্ত করলে প্রচুর সংখ্যক লোকের প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগ শনাক্তকরণ সম্ভব। এতে করে আকস্মিক কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।