ঢাকা: দেশে ব্লাড ক্যান্সারসহ রক্ত সংক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে আড়াই কোটি মানুষ বিভিন্ন রক্ত রোগে ভুগছেন।
দেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক অগ্রগতি সাধিত হলেও বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশনের বিষয়ে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশনের একটি ইউনিট চালু থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী তা অপ্রতুল।
দেশে এখনও স্বয়ংসম্পূর্ণ বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন চিকিৎসা পদ্ধতি চালু নেই। এ চিকিৎসাটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় বেশিরভাগ রোগীর পক্ষেই বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না।
দেশে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন চালু হলে বিদেশের তুলনায় ১০ ভাগের ১ ভাগ ব্যয়ে রোগীরা এ চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন।
বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রেখেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে অটোলোগাস ও অ্যালোজনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সমৃদ্ধ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন চালু করা হচ্ছে।
সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ সোসাইটি অব হেমাটোলজির উদ্যোগে ঢাকা ক্লাবের হামিদুর রহমান সিনহা লাউঞ্জে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন: বাংলাদেশে সময়ের দাবি’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা জানানো হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। যেসব কারণে ব্লাড ক্যান্সারসহ রক্ত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে হয়তো এর কারণগুলো বাড়ছে। পরিবেশ দূষণ, খাবারে ভেজাল, চিকিৎসা ক্ষেত্রে অযৌক্তিক ওষুধের ব্যবহার, রেডিয়েশনসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান অতিমাত্রায় ব্যবহারে দেশে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ডা. শহীদুল্লাহ বলেন, বর্তমানে রোগ নির্ণয়ের আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালু হওয়ায় ডায়াগনোসিস বেশি হচ্ছে এবং ব্লাড ক্যান্সারও বেশি নির্ণয় হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশনের পরিধি বৃদ্ধি করা অতীব জরুরি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য মেডিকেল কলেজ ও ইনস্টিটিউটে এ সেবাটি চালু করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।
শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বলেন, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন বিষয়ে অভিজ্ঞ অধ্যাপক, চিকিৎসক, টেকিনিশিয়ানের সমন্বয়ে শিগগির এ সেবা সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ডা. মো. আব্দুল আজিজের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক কর্নেল (অব.) ডা. আব্দুল হাই এবং অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) একেএম মুস্তফা আবেদীন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব হেমাটোলজির সেক্রেটারি জেনারেল ডা. মো. সালাউদ্দিন শাহ।
তিনি জানান, দেশে প্রতি বছর প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার রোগী ব্লাড ক্যান্সার এবং রক্তরোগের পরিপূর্ণ চিকিৎসা ছাড়া মারা যায়। বছরে নতুনভাবে ১ হাজার
২০০ মানুষ রক্তরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং এর বাহক প্রায় ১০ শতাংশ।
হিমোফিলিয়াসহ অন্যান্য রক্তরোগের সঠিক পরিসংখ্যান সরকারিভাবে সংরক্ষণের জন্য দাবি জানান ডা. সালাউদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৪