আগুনের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। সাম্প্রতিক সময়ে পেট্রোল বোমায় পুড়ে যাওয়া মানুষের বিভৎস চেহারাগুলোই বলে দেয় আগুনের ভয়াবহতা।
পেট্রোল বোমার আঘাতে পুড়ে, বাড়ি ঘরে আগুন লেগে পুড়ে বা অন্য যেকোনোভাবে পুড়ে গেলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে আমাদেরও কিছু করণীয় আছে। এ সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে আমারা কিছু ব্যবস্থা নিলে আগুনে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেক কমানো যাবে।
যতো তাড়াতাড়ি ও দক্ষতার সাথে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হবে ততোই ক্ষতির মাত্রা কমবে। আগুনে পোড়ার প্রাথমিক চিকিৎসায় পোড়ার ধরনভেদে কিছুটা ভিন্নতা আছে। কাজেই প্রথমে আমরা দেখে নেই। আগুনে পোড়ার প্রকারভেদ—
১. থার্মাল বার্ন। যেমন, বাড়ি ঘরে আগুনে লেগে পুড়ে যাওয়া।
২. কেমিক্যাল বার্ন। যেমন, এসিডের কারণে পুড়ে যাওয়া।
৩. ইলেক্ট্রিক্যাল বার্ন। বৈদ্যুতিক কোনো উৎসে গিয়ে পুড়ে গেলে।
বিভিন্ন প্রকার পোড়ার প্রাথমিক চিকিৎসা
থার্মাল বার্ন ও করণীয়
ক. আক্রান্ত ব্যক্তিকে উৎস থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এবং নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে দৌড়াতে নিষেধ করুন। দৌড় দিলে আগুনের মাত্রা বাড়বে। এতে শরীরে বিভিন্ন অংশে আগুন ছড়াবে।
রোগীকে মাটিতে বা মেঝেতে শুতে বলুন। লক্ষ রাখতে হবে বেশি পোড়া অংশ যাতে উপরের দিকে থাকে।
খ. মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া যাবে না। আমাদের সবার ধারণা মাটিতে গড়াগড়ি খেলে আগুন নিভে যায়। কিন্তু এতে হীতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। এতে শরীরের যে অংশ পুড়েনি সে অংশও পুড়ে যেতে পারে।
গ. যদি রোগী কথা বলতে না পারে বা অজ্ঞান হয়ে যায় সেক্ষেত্রে রোগীকে মাটিতে চিৎ করে শুইয়ে দিন। দুই পা উপরে তুলে ধরে ওই জায়গা থেকে নিরাপদে সরিয়ে আনুন।
ঘ. যদি আগুনের সাথে প্রচুর ধোয়া থাকে তবে যথাসম্ভব নিচু হয়ে থাকুন। এতে ধোঁয়া কম থাকায় আপনি শ্বাস নিতে পারবেন। কারণ ধোঁয়া, গরম বাতাস সবসময় ঊর্ধ্বমুখি থাকে।
ঙ. শরীরের পোড়া অংশে তাৎক্ষণিকভাবে পানি ঢালতে থাকুন। টেপের পাইপ দিয়ে পানি ঢালতে পারেন।
যদি পানি না পাওয়া যায় তবে অন্য কোনো অদাহ্য পদার্থ যেমন দুধ, কোমল পানীয় ব্যবহার করতে পারেন। ভারী সুতির কাপড় দিয়ে শরীর মুড়িয়ে রাখতে পারেন। কখনো কাদা বা মাটি পোড়া জায়গায় দেওয়া যাবে না।
চ. আগুনের উৎস থেকে রোগীকে সরানোর পর শরীরের সমস্ত কাপড় চোপড়, জুতা, মোজা, বেল্ট, অলংকার খুলে ফেলতে হবে।
ছ. নিজে থেকে কোনো মলম, লোশন, পেস্ট ইত্যাদি লাগানো যাবে না।
জ. দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।
কেমিক্যাল বার্ন
এসিড বা এলকালি দিয়ে যে বার্ন হয় তাকে কেমিক্যাল বার্ন বলে।
ক. কেমিক্যাল বার্ন এর ফলে নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। দরকার হবে গ্লাভস, মাস্ক, ও চোখের প্রটেকশন নিতে হবে।
খ. জামা, কাপড়, অলংকার খুলে রাখতে হবে।
গ. পানি দিয়ে আক্রান্ত জায়গা প্রশমিত করতে হবে।
ইলেক্ট্রিক্যাল বার্ন
বিদ্যুতের সাথে সংস্পর্শে যে বার্ন হয় তাকে ইলেক্ট্রিক্যাল বার্ন বলে। ইলেক্ট্রিক্যাল বার্নের ফলে শরীরের ভিতেরর মাংস, নার্ভ রক্তনালী মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ক. এ ধরনের পোড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজে নিরাপদ রেখেই অন্যকে উদ্ধারে সহায়তা করবেন।
খ. বৈদ্যুতিক উৎস যতো দ্রুত সম্ভব বন্ধ করে দিন।
গ. রোগীকে বিদ্যুৎ উৎস থেকে সরানোর পর রোগীর নড়াচড়া, পালস, শ্বাস প্রশ্বাসের গতি লক্ষ করুন। এক্ষেত্রে রোগীর হার্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। হার্ট বন্ধ হয়ে গেলে সি.সি. আর (কার্ডিওপালসনারি রিসাসিটেশন) দিতে হবে। অর্থাৎ রোগীর বুকের মাঝখানে দুই হাত দিয়ে চাপ দিতে হবে। মিনিট ৩০ বার। মুখ দিয়ে শ্বাস দিতে হবে মিনিট দুবার। দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৫