ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

তিনি মনপুরার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, আঙ্গ টিএইচ স্যার

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৬
তিনি মনপুরার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, আঙ্গ টিএইচ স্যার ছবি- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

মনপুরা, ভোলা থেকে: রোববার সন্ধ্যায় দক্ষিণ সাকুচিয়ার কোরালিয়া বাজারে আয়োজন করা হয়েছে জারি গানের। গেরুয়া পোশাকে পুরো দস্তুর বাউলিয়ানা সাজে যিনি শরীর দুলিয়ে সুর তুলেছেন, তিনি মনপুরার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মাহমুদুর রশিদ।

 

সাদা কালো দাঁড়িতে চোখে চশমার এ নতুন গায়েনকে দেখে অনেকেই থমকে দাঁড়াচ্ছেন। পরক্ষণেই সঙ্গে থাকা লোকটির দিকে ফিরে বলছেন, ‘আঙ্গ টিএইচ (ইউএইচএফপিও-কে স্থানীয়রা টিএইচ স্যার সম্বোধন করেন) স্যার। ’

স্বাস্থ্য সেবার ক্যাটাগরিতে দুর্লভ অবস্থানে থাকা মনপুরায় জনগণের দোঁড়গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে তিনি নিজস্ব এ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছেন। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে বাজারে বাজারে ছুটে চলেন জারি গানের দল নিয়ে, পৌঁছে দেন স্বাস্থ্য বার্তা। বিশেষ করে মাতৃমৃত্যু শূন্যে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই তার এ দিনরাতের শ্রম।

উপজেলা শিল্প একাডেমির খুদে শিশুরা, চর ফৈজুদ্দিন কমিউনিটি ক্লিনিকের পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মী বিনা রানী দাশ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারীদের নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন এ জারি গানের দল।

'ডেলিভারির পরে মায়ের বিপদ অাছে ভাই/ দুই দিন পরে ডাক্তার দেখাই তাই...। ' 'সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভাই... (কোরাস)। '

আবার, 'ডেলিভারির অাগে নিতে হবে পরিকল্পনা/ জোগাড় থাকতে হবে অ্যাম্বুলেন্সের নাম্বারখানা..। ' 'সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভাই..(কোরাস)। '

এ ধরনের অসংখ্য গর্ভকালীন সময়ের স্বাস্থ্য তথ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে জারিগানের পঙক্তিগুলো। গানের মাঝে মাঝে প্রয়োজনীয় বার্তাগুলো বলেও দেন তিনি। গান শুনতে অাসা মানুষকে প্রশ্ন ছোড়েন, 'অ্যাম্বুলেন্সের নাম্বারখানা জানা অাছে?' প্রায় ১৫ মিনিট দীর্ঘ জারির সঙ্গে দ্বীপবাসীও শরীর নাড়েন, কথা শুনেন ডা. মাহমুদুরের।

চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারিতে ভোলার লালমোহন উপজেলা থেকে পদোন্নতি পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে মনপুরায় অাসেন ডা. মাহমুদুর। রোববার বাংলানিউজকে বলেন, এখানে বাল্য বিবাহ ও মাতৃমৃত্যু হার অনেক বেশি। এর মূল কারণ সচেতনতার অভাব, মানুষের কাছে তথ্য নেই।

আর মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অাসতে চাইতেন না। কারণ পূর্বে হাসপাতালের দ্বায়িত্বপ্রাপ্তরা রোগীদের কাছ থেকে টাকা নিতেন। এখন তা বন্ধ করা হয়েছে। এখন দরকার রোগীদের হাসপাতালে আনা, সেবার মান বাড়ানো। তাই প্রচারণা করে কাজটি করতে হবে, বলেন মাহমুদুর।

এছাড়াও চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে মানুষের সঙ্গে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো জনগণের সঙ্গে অালাপ করেন তিনি। ডা. মাহমুদ বলেন, অনেক সময় স্ত্রীকে হাসপাতালে যেতে বাধা দেয় স্বামীরা। তাই পুরুষদেরও সচেতন করতে এ পরিকল্পনাগুলো নিয়েছেন তিনি।

কোয়ালিয়া বাজারের জেলে রহিম বাংলানিউজকে বলেন, এই টিএইচ স্যার আসার পর থেকে এখন অার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে টাকা লাগে না। হাসপাতালের পরিবেশ ভালো হয়েছে। তবে ওষুধ নেই, এটা একটা সমস্যা।

**মনপুরায় ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই, যন্ত্র নেই
**মনপুরায় বঙ্গবন্ধুর সেই চিন্তানিবাসের ভূমিও নদীগর্ভে বিলীন
*** জলদস্যুর ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত মনপুরা


বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৬
এমএন/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।