উদ্ধার ও জব্দ হওয়া ওষুধের মধ্যে ইনজেকশনই বেশি।
এনিয়ে কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে গোটা হাসপাতাল প্রশাসন।
পাশাপাশি এ ঘটনায় আরো কেউ জড়িত কি-না, তা খতিয়ে দেখতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কুদ্দুস মোল্লা আদালতে বিলকিস বেগমের সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছেন। তবে হাসপাতাল প্রশাসনের করা দু’টি তদন্ত কমিটির তদন্তে মেডিসিন মেইন ও সাব স্টোরের কাগজপত্রে কোনো ধরনের ঘাপলা পাওয়া যায়নি। কাগজে-কলমে বলা হয়েছে, যেসব ওষুধ পুকুর থেকে উদ্ধার হয়েছে, সেগুলো গত বছরের জুলাই মাসে হাসপাতালের স্টোরে এসেছে এবং নভেম্বর মাসে স্টোর শেষ হয়ে যায়।
হাসপাতালের উপ-পরিচালককে প্রধান করে গঠিত তৃতীয় তদন্ত কমিটি সোমবার (১৫ মে) দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন পেশ করবেন। তারাই মূলত মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে মজুদ ওষুধ জব্দ করেন। হাসপাতালের নার্সিং তত্ত্বাবধায়ক মমতাজ বেগম জানান, তিনি যোগদানের পরই গ্রেফতারকৃত সেবিকা বিলকিসের বিরুদ্ধে কিছু মৌখিক অভিযোগ শোনেন। তবে এতো বড় ধরনের অপরাধ করবেন, তা কারো জানা ছিলো না। ওই ওয়ার্ডে সুপারভাইজাররা নিয়মিত যাওয়া-আসা করতেন, কিন্তু কোনো কিছু বোঝার উপায় ছিলো না। আবার সর্বশেষ অডিটে সবচেয়ে সুন্দরভাবে খাতায় হিসেব-নিকেশ আপডেট পাওয়া যায় বিলকিস বেগমের ওই ওয়ার্ড থেকেই।
তবে সিনিয়র স্টাফ নার্সরা জানিয়েছেন, নার্সিং সুপারভাইজাররা যদি আরো সচেতন হতেন, শুধু কাগজে-কলমে না দেখে ওয়ার্ডের স্টোর ও বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করতেন, তবে এ ধরনের অপরাধ শুরুতেই ধরা পড়তো।
নার্সিং তত্ত্বাবধায়ক মমতাজ বেগম জানান, এ ধরনের ওষুধ রাখার অপরাধ কারো একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। ইনজেকশনের ভায়েল (খালি বোতল) জমা দিয়ে যেখানে ওষুধ আনতে হয়, সেখানে হাজার হাজার ওষুধ ওই ওয়ার্ডে পাওয়ার বিষয়টিই আরো অনেকের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে। এগুলো হাসপাতাল প্রশাসনের খতিয়ে দেখা উচিত। তবে সাব স্টোরের ইনচার্জ লিটন বাংলানিউজকে জানান, অর্ডার খাতায় বিভাগীয় প্রধান, রেজিস্ট্রারসহ অনেকেরই স্বাক্ষর থাকে। আর সে খাতার চাহিদা অনুসারে তিনি ওয়ার্ডে ওষুধ সরবরাহ করে থাকেন। পাশাপাশি ভায়েলও জমা নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে অন্যভাবে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন ওই সেবিকা।
তবে হাসপাতালের ওষুধের মেইন স্টোর কর্মকর্তা ডা. মাহামুদ হাসান খান জানান, সাব স্টোরে জনবল কম রয়েছে। ধার করে জনবল নিয়েও কাজ করতে হয়। সেক্ষেত্রে অনেক সময় বেশি ভায়েল হলে গোনা সম্ভব হয় না। বিষয়টি পরিচালককেও অবহিত করা হয়েছে। আর এ সুযোগে হয়তো মুখে ৫০০ ভায়েলের কথা বলে ১০০ ভায়েল হয়তো জমা দিয়েছেন ওয়ার্ড ইনচার্জ। আবার ডাবল বেড দেখিয়েও ওষুধ উত্তোলন করতে পারেন।
তবে ওই ওয়ার্ডসহ বেশকিছু ওয়ার্ডের বিষয়ে সন্দেহ থাকায় বেশিরভাগ সময় নেই বলে চাহিদার চেয়ে কিছু কম ওষুধ দেওয়া হতো। দেখার জন্য যে, তারা আবার ওষুধ নিতে আসেন কি-না।
পরিচালক ডা. এস এম সিরাজুল ইসলাম তদন্ত কমিটির বরাত দিয়ে বলেন, ঘটনার সঙ্গে স্টোরের কারো জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্তে পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার ছাড়া একদিনের বেশি ওষুধ কোনো ওয়ার্ডেই দেওয়া হয় না। সেখানে মজুদের প্রশ্ন তো নেইই, এটি পুরোপুরি নিয়ম বহির্ভূত। তবে এর সঙ্গে কারা জড়িত, তা বিলকিস বেগমই বলতে পারবেন।
গত শুক্রবার (১২ মে) সকাল থেকে স্টাফ কোয়ার্টারের ৪ নম্বর ভবনের সামনের মজা পুকুরে সরকারি ওষুধ ও ইক্যুইপমেন্ট ভাসতে দেখে স্থানীয়রা কোতোয়ালি থানায় খবর দেন। পুলিশ ওষুধ উদ্ধার শেষে হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের আয়া শেফালি বেগম ও তার ছেলে মামুনকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের বাসা থেকে সরকারি ওষুধ ও যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়।
পুলিশ মামলার পর তদন্ত করতে শনিবার (১৩ মে) দুপুরে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে তল্লাশি চালায়। এ সময় ওয়ার্ডের সেবিকা কক্ষে বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ ও বিছানার চাদরসহ অন্য মালামাল মজুদ পাওয়া যায়। যা স্বাভাবিক নিয়ম বহির্ভূত বলে জানান হাসপাতাল প্রশাসন। এরপর ওয়ার্ডের ইনচার্জ স্টাফ নার্স বিলকিস বেগমকে গ্রেফতার করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৭
এমএস/এএটি/এএসআর