শুক্রবার (২৫ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে বিইএস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
থাইরয়েডজনিত রোগ বিশ্বের ১ নম্বর রোগ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা বলেন, বাংলাদেশে সম্ভাব্য থাইরয়েড হরমোনজনিত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি।
‘থাইরয়েড হরমোন কম বা বেশি নিঃসৃত হওয়া উভয়ই রোগের সৃষ্টি করে। তাই বিয়ের আগে কিংবা গর্ভধারণের পূর্বে নারীদের অবশ্যই থাইরয়েড পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। এ রোগের সম্ভাবনা থাকলে যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে তারপর গর্ভধারণ করা উচিত। নইলে বাচ্চাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ না থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। ’
ডাক্তাররা বলেন, এ হরমোনের তারতম্যের ফলে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, হঠাৎ করে শরীর মোটা ও চিকন হওয়া, মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, হার্টের সমস্যা, চোখ ভয়ংকর আকারে বড় হয়ে যাওয়া, বন্ধ্যাত্ব, এমনকি ক্যানসারের সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণত একজন পুরুষের বিপরীতে ১০ জন নারীর থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হয়।
এ রোগের প্রতিরোধের বিষয়ে বক্তারা আরও বলেন, সব বয়সের মানুষের স্ক্রিনিং, আয়োডিনের অভাব, ভেজাল খাদ্য ও আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করা এ রোগের প্রধান প্রতিরোধক বিষয়। এছাড়া সরকার খুব সহজে থাইরয়েডের বাধ্যতামূলক স্ক্রিনিং চালু করতে পারে। পাশাপাশি বাজারের লবণগুলোর আয়োডিনের মান নিশ্চিত করতে পারে। আমাদের গবেষণা অনুসারে বাজারের লবণে সঠিক আয়োডিনের মাত্রা নেই। এছাড়া প্রতিটি বাচ্চা জন্মগ্রহণের পর বাধ্যতামূলকভাবে থাইরয়েড পরীক্ষা নিশ্চিত করা উচিত। কেননা বিকলাঙ্গ বাচ্চা আমাদের কারোরই কাম্য নয়।
‘এক গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের শহরের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ গর্ভবতীরা থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। আর গ্রামের পরিস্থিতির কোনো রেকর্ড নেই, তাই ধারণা করা যায় সেখানকার অবস্থা আরও করুণ। ’
এদেশে থাইরয়েডের উচ্চমানের চিকিৎসা রয়েছে উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, এই রোগের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এখানে আয়োডিনের ডোজ মাত্র ৩০০ টাকা আর সিঙ্গাপুরে তার খরচ ৫০ হাজার টাকা। আর অন্য দেশে আরও বেশি। এদিকে এই রোগের পরীক্ষা করাতে দেশের সরকারি হাসপাতালে খরচ মাত্র ২৫০ টাকা আর বেসরকারিতে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এছাড়া দেশের সরকারি বেসরকারি সব হাসপাতালে হরমোন বিষয়ক চিকিৎসক রয়েছেন। পাশাপাশি অন্য বিভাগের ডাক্তাররা চিকিৎসা সম্পন্ন করতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিইএসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান, সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. হাফিজুর রহমান, সংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহজাদা সেলিমসহ প্রমুখ।
এসময় বক্তারা শনিবার (২৬ মে) ঢাকা মেডিকেল কলেজে এ বিষয়ে চিকিৎসক ও রোগীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারের ঘোষণা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৮
এমএএম/এএ