ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রাজশাহীর বিভাগের ১১৫ জন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২০
বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রাজশাহীর বিভাগের ১১৫ জন

রাজশাহী: দেশে নতুন করে আরও তিনজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবরে আবারও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন সবাই। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক বিরাজ করছে। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বিভাগীয় প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের পরও উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন-রাত কাটছে রাজশাহীর মানুষের।

শ্বাসরুদ্ধকর এই পরিস্থিতিতে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১১৫ জন মানুষ। সদ্য বিদেশ ফেরত এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন হোম কোয়ারেন্টাইনের এই তিন সংখ্যার হিসেবে।

তবে দেশের অন্যান্য জেলা শহরে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষজন জনসমাগমে বেরিয়ে আসলেও রাজশাহী চিত্র অনেকটাই ভিন্ন।

নিজের, পরিবারের ও দেশের স্বার্থে স্বেচ্ছায় হোম করা কোয়ারেন্টাইনে থাকা বিদেশ ফেরত মানুষ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা নিজেদের একরকম অবরুদ্ধ করে ফেলেছেন। করোনা ভাইরাস নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক থাকায় তারাও এখন প্রয়োজনের চেয়ে বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করছেন। নিজের পাশাপাশি প্রতিবেশির দিকেও সমান নজর রাখছেন। পাড়া-মহল্লায় কেউ বিদেশ থেকে আসলে সামাজিকভাবেই ওই পরিবারকে এড়িয়ে চলছেন অন্যরা। এছাড়া ওই পরিবারকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

রাজশাহী জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা চারজনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ মেলেনি। এই কারণে তাদের সোমবার (১৬ মার্চ) রিলিজড দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে রাজশাহী বিভাগের অন্য সাত জেলায় কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।

রোববার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ৯৫ জন। সোমবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৫ জনে। নতুন করে হোম কোয়ারেন্টাইনে গেছে আরও ২০ জন। তারা সবাই বিদেশ ফেরত। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে দেশে ফেরায় তাদের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী- সোমবার পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৭০ জন, নাটোর জেলার তিনজন, নওগাঁ জেলায় ১৬ জন, জয়পুরহাট জেলায় ছয়জন, বগুড়া জেলায় ১১জন, সিরাজগঞ্জ জেলায় ছয়জন ও পাবনা জেলায় তিনজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের অন্তত ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হবে। প্রত্যেকেই স্বাস্থ্য বিভাগের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় তাদের কারও মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ পাওয়া গেলেই কেবল নমুনা সংগ্রহ করা হবে।

এদিকে বগুড়া করেসপন্ডেন্ট কাওছার উল্লাহ আরিফ জানান, বিভাগের বগুড়া জেলায় বিদেশ ফেরত ১১ জনকে বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে তারা সুস্থ রয়েছেন। এরপরও ১৪ দিন পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিজেদের বাড়িতেই অবস্থান করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মীরা সকলের বাড়িতে গিয়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকার সময় করণীয়গুলো তাদের পরিবারের সদস্যদের শিখিয়ে দিয়ে এসেছেন।

বগুড়ার সহকারী সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন বাংলানিউজকে জানান, করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিদেশ ফেরত ব্যক্তিরা সুস্থ আছেন। তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণ করা হবে। তাদের প্রত্যেকের পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয়রা এ বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক রয়েছেন। হোম কোয়ারেন্টইনে থাকা ব্যক্তিরা কোন অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ করেসপন্ডেন্ট একে এস রোকন জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদেশ ফেরত সকল পাসর্পোটধারীকে স্বেচ্ছায় ১৪দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিদেশ ফেরতদের সবার পূর্ণাঙ্গ নাম পরিচয় সংরক্ষণ করা হচ্ছে। গত রোববার (১৫ মার্চ) বেলা ১টার পর থেকে ভারতীয় মোহদীপুর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ পাসর্পোটধারী যাত্রী পারাপার বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিরা ঠিকঠাকভাবে স্বাস্থ্যবার্তা মানছেন কী না তা মনিটরিং করছে না এই জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ। কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষ নিজেদের মতো করেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সোনামসজিদ বন্দর ব্যবহারকারী সকল পণ্যবাহী ট্রাকচালক ও এর সহকারীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া রহনপুর শুল্ক স্টেশনে ভারত থেকে আসা ট্রেন চালক, সহকারী ও ব্যবস্থাপকদের অস্থায়ী মেডিক্যাল টিম দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ টির্চাস ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের একটি ভবন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ইশ্বরদী করেসপন্ডেন্ট টিপু সুলতান জানান, রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতেই গড়ে উঠছে দেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। 'রূপপুর' প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কারণে এই প্রতিষ্ঠান ঘিরে অনেক বিদেশি নাগরিকের বসবাস। এছাড়া ইপিজেড হওয়ায় ঈশ্বরদীতে এখন প্রায় তিন হাজারের বেশি বিদেশি নাগরিক আছেন। বর্তমানে ভারতের মালদহ, উজবেকিস্তান, মালয়েশিয়া শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি দেশের বিদেশি নাগরিক এবং রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে চীন, ভারত রাশিয়া, মালদহসহ বেশ কয়েকটি দেশের বিদেশিরা বসবাস করেন। কিন্তু এখনো করোনায় আক্রান্ত কারও সন্ধান মেলেনি। তবে পাবনা জেলায় তিনজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম শামিম বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি রাখা হয়েছে অতিরিক্ত নার্স ও চিকিৎসক। তাদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ পোশাক সরবরাহ করা হয়েছে।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা কারও মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ মেলেনি। সোমবার রাজশাহী জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা চারজনকে রিলিজড দেওয়া হয়েছে। তারা ১৪ দিন ছিলেন। কিন্তু কোনো উপসর্গ না পাওয়া যাওয়ায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রিলিজড করে দেওয়া হয়েছে। এখন ১১৫ জনের যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন তারা সবাই বিদেশ ফেরত এবং তাদের পরিবারের সদস্য।

তিনি জানান, তারা মোট ১৪ দিন নিজ বাড়িতেই অবরুদ্ধ থাকবেন। স্বাস্থ্য বিভাগের নির্শেনা মেনে চলবেন। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকেও তাদের নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। কেউ যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানেন বা বাইরে বের হয়ে আসেন তবে তাদের বাধ্যতামূলক অফিসিয়াল কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। নির্দেশনা না মানলে সংক্রামক ব্যাধি আইনে তাদের জরিমানা করা হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২০
এসএস/এইচএমএস/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।