জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মানুষের নাগরিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গড়ে তোলে। পরবর্তী সময়ে নবম জাতীয় সংসদকালীন এ হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবলসহ সেবার মানের উন্নতি ঘটেনি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
প্রতিবছর নতুন নিয়োগের সময় চিকিৎসক ভরে গেলেও তা আস্তে আস্তে বদলী আর প্রেষণে চলে যাওয়ায় চিকিৎসক সংকটে ভোগে হাসপাতালটি। বর্তমানে চলার মতো চিকিৎসক থাকলেও নেই ল্যাব টেকনোলজিস্ট। হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় ল্যাবটি তালাবদ্ধ রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ডা. মেশকাতুল আবেদ। পরে তিনি হাসপাতালের এ চিত্র দেখে টেকনোলজিস্ট চেয়ে একাধিক আবেদন করেন। কিন্তু সরকারিভাবে না পাওয়ায় স্থানীয়দের সহায়তায় উম্মে মমেনীন চৌধুরী শিমুল নামে স্থানীয় একজন টেকনোলজিস্টকে বিনা বেতনে চুক্তিভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ল্যাব চালু করেন। কয়েক মাস পরে ডা. মেশকাতুল আবেদ বদলী নিয়ে চলে যাওয়ায় আবারো ভোগান্তিতে পড়ে কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সংকট বেড়ে যায়।
করোনা শনাক্তে নমুনা সংগ্রহ করার কাজটি করেন ল্যাব টেকনোলজিস্ট। আর এ উপজেলায় সেই গুরুত্বপূর্ণ পদটি শূন্য। স্থানীয়ভাবে নিয়োগ পাওয়া উম্মে মমেনীন শিমুলকে দিয়ে কয়েকদিন নমুনা সংগ্রহ করা হলেও সম্প্রতি সময় এ উপজেলায় একজন শনাক্ত হওয়াতে ঝুঁকিভাতা ও চূড়ান্ত নিয়োগ ছাড়া বেসরকারি সেই টেকনোলজিস্ট কাজে যেতে অনীহা প্রকাশ করছেন বলে দাবি করেছেন করোনা মনিটরিং টিমের সদস্য উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক মাহবুব আলম।
মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) এ উপজেলায় প্রথম শনাক্ত করোনা রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসলোশন ওয়ার্ডে ভর্তি করে ৬টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। তবে প্রয়োজন হলেও টেকনোলজিস্ট না থাকায় গত চারদিনেও ওই রোগীর পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এতেই শেষ নয়। নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে পৃথক একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন হলেও এ উপজেলায় তা নেই। ফলে সদর হাসপাতালের করোনা অ্যাম্বুলেন্সটি এ উপজেলায় অতিরিক্ত সেবাদান করছেন। এক্ষেত্রে সদর উপজেলার চাহিদা পূরণ করার পরে এ উপজেলায় সেবা দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সটি। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা। বিশেষ করে করোনা সংক্রমণরোধে সেবা দিতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে এ উপজেলায়। ফলে করোনা যুদ্ধে সাহসের পরবর্তীতে এ উপজেলাবাসীর মধ্যে বাড়ছে আতঙ্ক। সংক্রমণ শুরু হলে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
স্বেচ্ছাসেবী টেকনোলজিস্ট উম্মে মমেনীন চৌধুরী শিমুল বাংলানিউজকে বলেন, পড়ালেখা শেষ করে টেকনোলজিস্ট হিসেবে নিয়োগের অপেক্ষায় ছিলাম। তাই অবসর সময়ে স্থানীয় হাসপাতালে টেকনোলজিস্টের অভাবে ল্যাব বন্ধ থাকায় প্রতিবেশীদের সেবা দিতে স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়েছি। করোনা প্রাদুর্ভাবে সরকারি নিয়োগপ্রাপ্তরা ঝুঁকিভাতা থাকার পরেও কাজে যেতে অনীহা করছেন। আমি বিনা ভাতায় ঝুঁকি নিচ্ছি। আমার সংগ্রহের নমুনায় একজন শনাক্ত হওয়ায় আমার পরিবার আমাকে স্বেচ্ছাশ্রমে যেতে নিষেধ করেছেন। তবে সরকারিভাবে ঝুঁকি ভাতা বা সম্মানির ঘোষণা দিলে কাজে ফিরবেন বলেও জানান তিনি।
আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর আরেফিন প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, ভলান্টিয়ার টেকনোলজিস্ট দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছিল। তাই শূন্য পদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কিছু বলা হয়নি। তবে শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজন হলেও সিভিল সার্জনের নিষেধাজ্ঞায় করা হয়নি। লক্ষণ প্রকাশ পেলেই নমুনা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বাংলানিউজকে বলেন, টেকনোলজিস্টরাই নমুনা সংগ্রহ করেন। এ হাসপাতালে টেকনোলজিস্ট শূন্যের বিষয়টি জানা নেই। খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আতঙ্কের কিছু নেই। করোনার লক্ষণ দেখা দিলেই তার নমুনা সংগ্রহ করা হবে। ইতোপূর্বে শনাক্ত হওয়া জেলার ৩ রোগী সুস্থ রয়েছেন। দুই-এক দিনের মধ্যে প্রথমের দুই জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, মে ০২, ২০২০
এএটি