কক্সবাজার: সারাদেশের মতো কক্সবাজারেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে শনাক্তের হার বেড়েছে সাড়ে প্রায় ৫ শতাংশের বেশি।
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) বিকেলে জেলা প্রশাসনের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে করোনা রোধে জরুরি সভায় ১২টি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্বান্ত নেওয়া হয়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় জেলায় করোনা সংক্রমণ রোধের পাশাপাশি এর হাত থেকে জেলাবাসীকে সচেতন করতে জেলা প্রশাসন এবং পৌরসভার উদ্যোগে মাস্ক পরিধান নিশ্চিতকরণ, মসজিদে, প্যাগেডাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সচেতনতার বিষয়ে প্রচার, পর্যটন এলাকায় নিয়মিত অভিযান, হোটেল-মোটেল জোনে মাস্ক পরিধান ও স্যানিটাইজেশন নিশ্চিতকরণে মালিকদের সঙ্গে সচেতনতামূলক সমাবেশ, হাসপাতাল সমূহকে প্রস্তুত রাখা, সরকারি লজিস্টিক সাপোর্ট প্রস্তুত রাখা, পর্যটকদের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ টিম গঠন, সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় সমন্বয়, হোস্ট কমিউিনিটিকে সজাগ করতে স্থানীয় মিডিয়াতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম প্রচার এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে কার্যকর করতে দ্রুত কমিটি গঠনসহ নানাবিধ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্বান্ত নেওয়া হয়।
সভায় কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার ডা. সৌনম বড়ুয়া বাংলানিউজকে জানান, কক্সবাজারে সোমবার (১৫ মার্চ) পর্যন্ত করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৯৭ হাজার। সেখানে আক্রান্তের হার ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ০৬ শতাংশ। করোনা রোগী ৬ হাজার ১১১ জন এবং এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৮২ জন। এর মধ্যে স্থানীয় ৭৩ জন, অন্যরা রোহিঙ্গা। এখনো ৭ শতাংশ করোনা রোগী সুস্থ হননি বলেও তিনি জানান।
গত এক সপ্তাহে সারাদেশের মতো কক্সবাজারে ও করোনা আক্তান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে জানিয়ে তিনি আরও জানান, গত ফেব্রয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত গড়ে ৩০০ এর অধিক পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ মার্চে ৪৫৭ জনে ৯ জন, ১২ মার্চে ৩৪৩ জনে ১০ জন, ১৩ মার্চে ৩৩৭ জনে ১৪ জন, ১৪ মার্চে ৩৯৫ জনে ১৬ জন এবং ১৫ মার্চে ৩৭২ জনে ১১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়।
কিন্তু বর্তমানে আক্রান্তের হার আরও বেড়ে গেছে। যা আমাদের জন্য অশনি সংকেত।
সভায় করোনার টিকাদান বিষয়েও একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন ডা. সৌনম বড়ুয়া।
এতে জানানো হয়, কক্সবাজারে করোনার টিকা এসেছে ৮৭ হাজার ২২৮টি। প্রয়োগ করা হয়েছে ৬৭ হাজার ৭৫৭ জনের শরীরে। ৯ কেন্দ্রে ২৬টি বুথে এ টিকাদান কার্যক্রম চলেছে।
সভায় কোভিড-১৯ রোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভায় স্বাস্থ্য বিভাগ, সংশ্লিস্ট প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা করোনা বাড়ায় কক্সবাজারবাসীর জন্য সর্তকতা এবং করনীয় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরা হয়।
সভায় কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান গত বছর পৌরসভার কন্ট্রাক ট্রেসিং টিমকে সরকারিভাবে কোনো সম্মাননা কিংবা সহায়তা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, গত বছর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলামের নেতৃত্বে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে কার্যক্রম চালিয়েছে তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয় কিন্তু করোনার এ যোদ্ধাদের সরকারিভাবে কোনো সম্মাননা দেওয়া হয়নি। এ সময় তিনি এ বিষয়ে নব জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আর্কষণ করেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের করোনা রোধ সেলের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শাহজাহান নাজির সবার সামাজিত দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরিধান, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, করোনার দৈনন্দিন আক্রান্তের হার বৃদ্ধিকে মাথায় রেখে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এতে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরে বক্তব্য রাখন স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মিসেস শ্রাবস্তি রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান, ডা. মহিউদ্দিন আলমগীর, জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের চিকিৎসক, রাজনৈতিক প্রতিনিধি এবং স্থানীয় মিডিয়াকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫২ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২১
এসবি/এসআরএস