ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

হাসপাতালে ভর্তির ৫ দিনের মধ্যে ৪৮% করোনা রোগীর মৃত্যু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২১
হাসপাতালে ভর্তির ৫ দিনের মধ্যে ৪৮% করোনা রোগীর মৃত্যু

ঢাকা: দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) রোগের তীব্রতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। একই সঙ্গে লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।

পাশাপাশি আক্রান্ত রোগীরা মারাও যাচ্ছেন খুব দ্রুত। হাসপাতালে করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে মারা গেছেন। এবং ৫ থেকে ১০ দিনের ভেতরে মারা গেছেন আরো ১৬ শতাংশ।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ২৮ জানুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে তাদের ওয়েরসাইটে শনিবার (১৭ এপ্রিল) রাতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

আইইডিসিআর বলছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪৪ শতাংশ। ৩৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বা হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এই প্রতিষ্ঠান বলছে, করোনায় গত মার্চে ৬৩৮ জনের মৃত্যু হয়। আর এপ্রিলের প্রথম ১৫ দিনে মৃত্যুর সংখ্যা ৯৪১ জনে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ৩২ দশমিক ২ শতাংশ।

অন্যদিকে শুধু ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে তার আগের বছরের সর্বোচ্চ হারের চেয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন (৩০ জুন, ২০২০ মৃতের সংখ্যা ৬৪ জন)।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের মধ্যে ৫২ শতাংশ উপসর্গ শুরুর পাঁচদিনের মাথায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ২৬ শতাংশ উপসর্গ শুরুর ১০ দিনের মাথায় হাসপাতালে ভর্তি হন। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে উপসর্গ শুরুর ১১ থেকে ১৫ দিনের মাথায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১২ শতাংশ।

আইইডিসিআরের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের জুলাই মাসে যখন কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট মৃত্যুহার সর্বোচ্চ ছিল সে সময়ে নারী-পুরুষের মৃত্যুর (২২৬/৯৮২) অনুপাত ছিল ১:৩.৫। এ বছরের এপ্রিলে এসে দেখা যাচ্ছে নারী-পুরুষের মৃত্যুর (২৬৩/৬১৪) অনুপাত ১:২.২৩। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে নারী বেশি হারে মারা গেছেন।

এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক মহামারি পরিবর্তন করেছে মানুষের মনোজগৎ, তা আমরা আঁচ করতে পারি মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত মানসিক রোগের হার সংক্রান্ত জরিপের ফলাফলে। বাংলাদেশে ২০১৮ সালে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মানসিক রোগের হার ছিল ১৮.৭ শতাংশ। এর মধ্যে ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা (৬.৭ শতাংশ) আর দুশ্চিন্তার (৪.৭ শতাংশ) সমস্যা ছিল।

এতে বলা হয়, কোভিডকালে বাংলাদেশে পরিচালিত কয়েকটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৪৬ শতাংশের মধ্যে বিষণ্নতা আর ৩৩ শতাংশের অ্যাংজাইটি বা দুশ্চিন্তার লক্ষণ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ সাধারণ সময়ের চেয়ে কোভিডকালে মানসিক সমস্যা বাংলাদেশেও বেড়ে যাচ্ছে। গত একবছরে বাংলাদেশে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১৪ হাজার, যা পূর্ববর্তী বছরগুলোর চেয়ে বেশি।

সুনির্দিষ্টভাবে কোভিড নিয়ে কুসংস্কার, স্টিগমা, কোভিডভীতিতে পাঁচজনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক, চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা, মৃত্যুভয়, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, বেকারত্ব; এসব কারণে বাড়ছে মানসিক সংকট।

এতে আরো বলা হয়, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে করণীয়: কোনোভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। আতঙ্ক মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। মানসিক চাপ হ্রাস করতে হবে। এজন্য যা করতে হবে- ঘুমানোর স্বাভাবিক সময় ঠিক রাখা, নিজের পছন্দের বিষয় ও কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া, পরিবারের সঙ্গে গুণগত সময় কাটানো (যেমন পরস্পরকে উৎসাহ দেওয়া, পরস্পরের কাজে সহযোগিতা করা, ঘরের মধ্যেই একসঙ্গে সময় কাটানো ও পছন্দের কাজ করা), প্রতিদিন কিছুক্ষণ সময় অবশ্যই শারীরিক ব্যায়াম করা, নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে ঘরেই প্রার্থনা করা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।  

সর্বোপরি এ কঠিন পরিস্থিতিতেও টিকে আছি, বেঁচে আছি এজন্য সন্তুষ্ট থাকা, সবার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া। কিন্তু কোনোভাবেই পরিস্থিতি বা রোগে কোনো কারণেই কারো প্রতি করুণা প্রকাশ করা যাবে না।

তারা বলেন, অতিরিক্ত আতঙ্ক, অস্থিরতা, মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, ঘুমের ধরন পরিবর্তন ও আচরণগত পরিবর্তন দেখা গেলে আপনার কাছের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। অথবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২১
পিএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।