বরিশাল: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও গতিশীল করতে এবং ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করতে সেখানে পরিদর্শন করেছেন বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে হাসপাতাল পরিদর্শনকালে বিভাগীয় কশিনার মো. সাইফুল হাসান বাদল ও জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের সঙ্গে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেক কুমার, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন, শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম, উপ-পরিচালক ডা. জসিম উদ্দীন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসেন, জেলার সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, গেলো কয়েক সপ্তাহ ধরে বরিশালে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডেও রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। জনবল ও আইসিইউবেড সংকটের মধ্যে বাড়তি রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। এছাড়া সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা এতোটাই বেড়ে গেছে যে এখন ওয়ার্ডের বাহিরে খোলা জায়গায় প্যান্ডেল করে রোগীদের রাখতে হচ্ছে।
এসকল সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার বেলা ১১ টার দিকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও দুপুরে বরিশাল সদর (জেনারেল) হাসপাতাল পরিদর্শন করেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল। এসময় তিনি শেবাচিমের চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে এক সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন।
এসময় শেবাচিমের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা বলেন, হাসপাতালে বর্তমানে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের স্বল্পতা রয়েছে। পাশাপাশি সবধরণের চিকিৎসকসহ তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির জনবলেরও সংকট রয়েছে।
তারা বলেন, বর্তমানে করোনা রোগীর অত্যধিক চাপ রয়েছে কিন্তু করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্বরতদের কোয়ারেন্টিনে থাকার প্রয়োজনীয়তা থাকায় প্রায়ই চিকিৎসক ও সাপোর্টিং স্টাফ ঘাটতি থাকে। করোনা ওয়ার্ডে লিফট না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে রোগীরা। পাশাপাশি করোনা ওয়ার্ডে ভিজিটর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হওয়ার ফলে অতিমাত্রায় নোংরা হচ্ছে সেখানে। এছাড়া গোটা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংকটও রয়েছে। তারপরও করোনা ওয়ার্ডসহ গোটা শেবাচিম হাসপাতালের বিভিন্ন বর্জ্য অপসারণ করে হাসপাতাল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে গর্ত করে ফেলা হচ্ছে। তবে এতে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে। এছাড়া হাসপাতালের আইসিইউসহ বিভিন্ন ইকুপমেন্ট পরিচালনার জন্য দক্ষ টেকনিশিয়ান না থাকায় বিকল পরে থাকে দামি দামি সব যন্ত্রপাতি।
এসময় বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল সিটি করপোরেশনকে ময়লা বর্জ্য অপসারণের জন্য অনুরোধ করেন। পাশাপাশি গণপূর্ত বিভাগকে আগামী সাত দিনের ভেতরে লিফট চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন।
পরে বিভাগীয় কমিশনারসহ অন্যান্যরা শেবাচিম হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও করোনা ইউনিট পরিদর্শন করেন। সেখান থেকে তারা বরিশাল সদর হাসপাতালের ডাইরিয়া ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। সেখানের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।
এসময় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আমরা সবাই মিলে এই মহামারি প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করবো। সবাই নিজের স্থান থেকে দেশকে ভালোবেশে দেশের মানুষের সেবা করার চেষ্টা করবেন। বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সরকারের উপর মহলে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো।
এদিকে শেবাচিম হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন- জনবল, আইসিইউ, অক্সিজেন ও লিফট সংযোগের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এছাড়া হাসপাতালের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে আলোচনা হায়েছে, তারা এগুলো অপসারণ করবেন বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি আগামী সাত দিনের মধ্যে লিফটসহ অন্যান্য ছোটখাটো সমস্যাগুলো নিরসনে কাজ শুরু করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল, ২০২১
এসএস/কেএআর
হাসপাতাল পরিদর্শন করছেন বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছবি: বাংলানিউজ