ঢাকা: ভারতের ডাবল ভ্যারিয়েন্ট করোনা প্রতিরোধে দেশে আরও কঠোর, কার্যকর এবং দায়িত্বশীল ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তারা বলছেন, আতংকিত না হয়ে জনসাধারণ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও জোরদার করা উচিৎ।
ভারতের বিজ্ঞানীরা করোনা ভাইরাসের 'ডাবল মিউট্যান্ট-বি.১.৬১৭' চিহ্নিত করেছেন। এর পর থেকেই এ নিয়ে ভারতসহ প্রতিবেশী অন্যান্য দেশেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এই ডাবল মিউটেশনের কারণে ভাইরাসটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারে। ফলে এই ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা কাজ নাও করতে পারে।
যে কোনো ভাইরাসই ক্রমাগত নিজেকে বদলাতে থাকে। ফলে একই ভাইরাসের নানা ধরণ তৈরি হয়। এরমধ্যে কিছু ভ্যারিয়েন্ট অধিকতর ছোঁয়াচে এবং কিছুটা আগ্রাসী হয়ে যায়। তখন টিকা দিয়ে একে কাবু করা দুরূহ হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি ভারতে করোনা সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। যে কোনো সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় কাজ করে একটি হচ্ছে এজেন্ট ফ্যাক্টর (ভাইরাস), আরেকটি হচ্ছে হোস্ট ফ্যাক্টর (মানব)। সম্প্রতি ভারতে সংক্রমণ এবং মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার জন্য কোন ফ্যাক্টর দায়ী সেটা এখনও প্রমাণিত হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতসহ পশ্চিম বঙ্গে নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে নাকি মানব আচরণের কারণে সংক্রমণ বাড়ছে সেটা বলা যাচ্ছে না। কারণ ভারতে নির্বাচন এবং কুম্ভ মেলার মতো আরও অনেক ধর্মীয় আয়োজনে অনেক বেশি লোকসমাবেশ হয়েছিল। সে কারণেও বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
ভারতের ডাবল ভ্যারিয়েন্ট আমাদের জন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ভারতের এই ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশে আসাটা খুবই স্বাভাবিক। এই ভ্যারিয়েন্ট যেহেতু দ্রুত সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম, তাই সেটা আমাদের দেশে এলে খুব খারাপ হবে। এই ভাইরাস সম্ভবত কম বয়সীরাও বেশি সংক্রমিত হয়। একই সঙ্গে মৃতুঝুঁকিও বেশি। তাই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দেশে ঢুকে পড়লে সমস্যা আরও প্রকট হবে, সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে।
ভারতের ডাবল ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন? এ প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ভারতের ডাবল ভ্যারিয়েন্ট যেন আমাদের দেশে না ঢুকতে পারে সেই বিষয়টা আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। একবার ঢুকে পড়লে এটাকে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। সরকার বর্ডারে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এটা একটা ভালো পদক্ষেপ। ভারতের সাথে আমাদের চেকপোস্ট ছাড়াও অনেক সীমান্তবর্তী স্থান রয়েছে, যেখানে মানুষজন অবাধে যাতায়াত করে, এগুলোও বন্ধ করা উচিৎ। আমাদের আরও বেশি নজরদারী এবং দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। এর পাশাপাশি আমাদেরকে শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হবে।
বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ভারতে ভাইরাসের যে ধরণকে আমরা ডাবল বা ত্রিপল ভ্যারিয়েন্ট বলছি, এই ধরণ অনেক সাংঘাতিক, তীব্র সংক্রামক এবং আগ্রাসী বলে ভারতেও যেভাবে প্রচার হচ্ছে, তা কিন্তু এখনও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী বিষয়টা এখনও ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট, ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন না। বিস্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা এখনও ভারতের এই ভ্যারিয়েন্টকে, ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন ঘোষণা করেনি। ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন হচ্ছে ইউকে ভ্যারিয়েন্ট, সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট, ব্রাজিলিয়ান ভ্যারিয়েন্ট। পৃথিবীতে অনেক ধরণের ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভারতে যে নমুনার ওপর ভিত্তি করে এ ভাইরাস বিষয়ে বলা হচ্ছে, তাতে নিশ্চিতভাবে বলা যায় না, এ ধরনের কারণেই সেখানে সংক্রমণ এবং মৃত্যু বাড়ছে। ভারত সরকারের নানা গাফিলতি, বিভিন্ন জনসভা, নির্বাচন, কুম্ভ মেলা, হাসপাতাল এবং অক্সিজেন সংকট, সব কিছু একসঙ্গে ঘটার কারণেও এমনটা ঘটতে পারে। আবার নতুন ভ্যারিয়েন্টের ভূমিকাও থাকতে পারে।
সতর্কতামূলক কার্যক্রম বিষয়ে জানতে চাইলে এই স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী বলেন, বেনিফিট অব ডাউট হিসেবে যেহেতু সংক্রমণ বাড়ার ক্ষেত্রে এই ধরণের ভূমিকা থাকতে পারে, তাই আমাদের আরও সতর্ক হওয়া দরকার। সীমান্তে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা এটা ভালো উদ্যোগ। পাশাপাশি মাস্ক পরা বাধ্যতামূলকসহ করোনার অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলা উচিৎ। কারণ যে কোনো ভ্যারিয়ন্টের ক্ষেত্রেই এসব প্রযোজ্য। একইসাথে ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম আরও বাড়ানো দরকার।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২১
আরকেআর/এজে