ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

চিকিৎসকের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে ‘রোবট’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২১
চিকিৎসকের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে ‘রোবট’

বরিশাল: মহামারি করোনার সংক্রমণ নিয়ে গোটা বিশ্ব উদ্বিগ্ন। করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীসহ সবাই।

চলমান পরিস্থিতিতে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত রোগীদের কাছে যেতো দ্বিধাবোধ করণে সংক্রমিত হওয়ার আতঙ্কে। আবার যারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যে বহু স্বজন, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।

আর এমন সব পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসকের সহায়ক হিসেবে ‘রোবট’ উদ্ভাবন করেছেন বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার ভদ্রপাড়া এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার সরদারের ছেলে ও গৈলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণীর ছাত্র শাওন সরদার সোলাইমান।

বিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থী জানান, ২০২০ সালের মার্চ মাসে যখন করোনা সংক্রমণ শুরু হয়, তখন বিভিন্ন হৃদয় বিদারক দৃশ্য ও ঘটনা জানতে পারেন। যেমন আক্রান্ত হলে মায়ের কাছে সন্তানের যাচ্ছে না, বাবা-মাকে ফেলে রেখে যাচ্ছে সন্তানরা এমন অনেক খবরই। তখনই সিদ্ধান্ত নেন করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবার জন্য একটি ‘রোবট’ তৈরি করবেন। এরপর অনলাইনে ‘রোবট’ উদ্ভাবনের ভিডিও দেখে মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টের সিস্টেম ডেভেলপ করতে শুরু করি।

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে চাওয়া শাওন আরো জানান, ২০২০ সালের মার্চ মাসে চূড়ান্তভাবে রোবট বানানোর কাজে হাত দেন। ধীরে ধীরে নিজেই এর ডিজাইন তৈরি করেন এবং নাম দেন ‘মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট’। এখন রোবটটি তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে, এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেন করোনায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা সহায়ক সেবাগুলো দিতে পারে সেই প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছেন। এতে করে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।  

এ রোবট করোনায় আক্রান্ত রোগীর বেডের পাশে গিয়ে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পরামর্শ দিতে পারবে। আবার রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ওঠানামা দেখা, রোগীর অবস্থান থেকে দূরবর্তী কোথাও চিকিৎসক থাকলে, তাকেও সরাসরি দেখাতে পারবেন। রোবটের পাঠানো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নতুন কোনো পরামর্শ রোগীকে দিলে বা করোনায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে রোবট তা বলিয়ে দেবে। হাত খরচের টাকা জমিয়ে প্রায় ১৮ হাজার টাকায় এ মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট নামক রোবটটি তৈরি করেছেন শাওন।  
তার বাবা দেলোয়ার জানান, নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর নিজ থেকেই শাওন বলতো সে রোবট বানাবে, তখন তার কথায় তেমন একটা গুরুত্ব দিতো না কেউ। তবে সে স্কুলে যাওয়ার হাত খরচার টাকা জমাতো আর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করতো। এখন তো একটি রোবট তৈরি করে ফেলেছে, যেটি কথাও বলছে।  

কম্পিউটার না থাকায় সিস্টেমের সব কাজ মোবাইল দিয়ে করতে হয় বলে জানিয়ে শাওন বলেন, এখন পর্যন্ত যা পেরেছেন তা নিজের চেষ্টায় এখন পর্যন্ত এসেছেন।
উল্লেখ্য, শুধু শাওন সরদারই নয় ঐতিহ্যবাহী গৈলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের আরো দুজন ছাত্র ইতোমধ্যে ‘রবিন’ ও ‘বঙ্গ’ নামে দুটি স্বয়ংক্রিয় রোবট উদ্ভাবন করেছেন। যা নিয়ে রীতিমতো হৈ-চৈ পড়ে গেছে।

এদিকে উপজেলার বাসিন্দা সন্তোষ কর্মকারের ছেলে শুভ কর্মকার ২০১৮ সালে রবিন নামের যে রোবটটি তৈর করেছেন সেটির ডেভেলপমেন্টের কাজ চলছে। বর্তমানে বরিশাল অমৃত লাল দে কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী শুভ কর্মকার বলেন, গ্যাস লিকেজ, অগ্নিকাণ্ড কিংবা দুর্ঘটনার খবর আমার কাছে ও নিকটস্থ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সিগন্যাল পাঠাতে পারা রবিনকে ২৫-৩০ হাজার টাকার মধ্যে তৈরি করেছিলাম। তখন রবিন চাকার মাধ্যমে চলাচল করতে পারতো। এখন আমি রবিনের প্রযুক্তি ডেভেলপ করছি যেন পা ফেলে চলাচল করতে পারে। বস্তু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আনা নেওয়া করতে পারে। রোবট রবিন হচ্ছে সেলফ লনিং রোবট। কম্পিউটারাইজড সিস্টেমের মাইক্রো প্রসেসর আছে। এর মাধ্যমে যেকোনো ধরনের প্রশ্নে সঠিক উত্তর দিতে পারে।

এই প্রযুক্তিবিদ জানান, রবিনের পাশাপাশি আরো দুটি রোবট তৈরিতে কাজ করছেন তিনি। যার থ্রিডি কাঠামো তৈরি করা শেষ। খুব শিগগিরই অবকাঠামো বাস্তবায়নে হাত দেবেন।  
উল্লেখ্য ২০১৮ সালের ১৫ মে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় বিজ্ঞান যন্ত্রের উদ্ভাবন বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে ২য় হয়ে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছ থেকে পুরস্কার লাভ করেন রবিনের উদ্ভাবক শুভ। এরপর সে ২০১৯ সালের ২৭ জুন ৪০তম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের হাত থেকে পুরস্কার নেয়। এছাড়াও সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০১৯ এ বিজ্ঞান বিষয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে ১ম হয়ে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়ে ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির হাত থেকে ‘বছরের সেরা মেধাবী’ পুরস্কার নেয় শুভ কর্মকার।

আর যারা রোবট নিয়ে কাজ করছে তারা সহায়তার আবেদন করলে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সহায়তার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাশেম।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২১
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।