বরিশাল: দক্ষিণাঞ্চলে দিন দিন করোনার রোগী বাড়ছে। এতে জেলা হাসপাতালগুলোসহ একমাত্র করোনা ডেটিকেটেড বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালেও বাড়ছে রোগীর চাপ।
যদিও জনবল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এরইমধ্যে চিঠি দিয়েছেন শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক। পাশাপাশি অন্য সংকটও দ্রুত নিরসনের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা।
হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা যায়, করোনা সংক্রমণের শুরুতে নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই শেবাচিম হাসপাতালের মূল ভবনের পূর্বপাশে নতুন ৫ তলা ভবনে চালু করা হয় করোনা ইউনিট। সেই থেকে ভবনটিতে শুধু করোনার উপসর্গ ও আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা হওয়ায় সেটিই করোনা ইউনিট হিসেবে পরিচিতি পায়।
ভবনটিতে প্রথমে ১০ বেড নিয়ে করোনা ইউনিট যাত্রা শুরু করলেও, ধীরে ধীরে ১শ ও ২শ বেডে উন্নীত করা হয়। সবশেষ গত সপ্তাহের সোমবার এই বেড সংখ্যা ৩শতে রূপান্তরিত করা হয়। কিন্তু সোমবার সকালে সেখানেই করোনা ও আইসোলেশনে ৩০৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন।
হাসপাতাল প্রশাসন বলছে, তৃতীয় ধাপে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ায় শেবাচিমে বেডের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। শয্যা বাড়ানো হলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবা রয়েছে ১০৩ জন রোগীর। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে ৬৯টি। আইসিইউ শয্যা রয়েছে ২২টি। ৪৭০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে পর্যায়ক্রমে সেবা দেওয়া হচ্ছে জরুরি রোগীর।
এদিকে ভবনের বিন্যাস ও রোগীর সংখ্যা অনুযায়ী জনবলের সংকট রয়েছে। তারপরও চিকিৎসাসেবা নিয়ে রোগীদের অভিযোগ নেই বললেই চলে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসক রয়েছেন ৯ জন। আর সেবিকা বা নার্স রয়েছেন ৫৯ জন এবং শ্রেণির কর্মচারী ছয়জন ও আনসার সদস্য রয়েছে চারজন। যাদের রোস্টার করে সেবা দেওয়া হয়। এছাড়া পেটে ভাতে পদ্ধতিতে করোনা ওয়ার্ডে ফুটফরমায়েশের কাজ করছেন ২১ জন নারী। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকটের কারণে এই ইউনিটের অবস্থা বেশ বেহাল। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা থাকতে দেখা যায়।
এসব বিষয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, অতিদ্রুত জনবল চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। এছাড়া জেলা প্রশাসনের কাছে আমরা কিছু স্বেচ্ছাসেবক চেয়েছি করোনা ইউনিট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য।
তিনি বলেন, করোনা ইউনিটের জন্য কিন্তু এখানে স্পেসিফিক কোনো ভবন নেই। আমাদের একটি ভবনকে করোনা ইউনিট করা হয়েছে। ভবনটির কাজ এখনও চলছে। গনপূর্তকে বলা হয়েছে দ্রুত কাজগুলো শেষ করার জন্য। এদিকে জনবল চেয়েও পাচ্ছি না, আগের জনবল দিয়ে মূল হাসপাতাল তো চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে, এর ওপর আবার করোনা ইউনিটে দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। এ কারণে আমরা বেড সংখ্যা আজ থেকে ৩শ করেছি। সেক্ষেত্রে জনবল ছাড়া এই ইউনিট চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে দিন দিন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় বরিশাল বিভাগের জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সাধারণ রোগীদের শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে না পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস বলেন, বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। এছাড়া বহির্বিভাগে রোগী সংখ্যা তো এমনিতেই অনেক। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হয়। যেসব রোগীদের চিকিৎসা জেলা বা উপজেলা হাসপাতালে সম্ভব তারাও এখানে ভিড় করছেন।
তাই সাধারণ সর্দি বা কাশির রোগী, অর্থাৎ যেসব চিকিৎসা জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে সম্ভব সেসব রোগীদের বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে না পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২১
এমএস/এএ