ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ফেনীতে ২ সাপ্তাহে মৃত্যু ৬১, অক্সিজেন লাগছে ৮৭ শতাংশ রোগীর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২১
ফেনীতে ২ সাপ্তাহে মৃত্যু ৬১, অক্সিজেন লাগছে ৮৭ শতাংশ রোগীর

ফেনী: চলতি মাসের দুই সাপ্তাহে শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গে ফেনীতে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে।  

এর মধ্যে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে মারা গেছেন ৫৪ জন।

মৃত ৬১ জনের মধ্যে ১৫ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছিল।

চিকিৎসকরা বলছেন, বর্তমানে শনাক্তকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৮০ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। করোনার এ ধরনটিতে মৃত্যুহার এবং প্রকটতা ব্যাপক। আর সে কারণেই চিকিৎসাধীন প্রায় ৮৭ শতাংশ রোগীর প্রয়োজন হচ্ছে অক্সিজেনের।

সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আরও বলছেন, অনেক রোগী তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পরপরই মৃত্যু হয়। কারও কারও কোভিড-১৯ এর সব ধরনের উপসর্গ থাকলেও নমুনা পরীক্ষায় তা শনাক্ত হয়নি। তবে এদের সবাই কোভিড-১৯ সাসপেক্টেড।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রিপন নাথ জানান, হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে গত ১৪ দিনে মৃত ৫৪ জনের মধ্যে ৮ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। তবে বাকি ৪৬ জনও শ্বাসকষ্টসহ নানা উপসর্গে ভুগছিলেন।  

একই সময়ে সোনাগাজী, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশন ওয়ার্ডে কারও মৃত্যু না ঘটলেও দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুবাইয়াত বিন করিম জানান, ওই তিন উপজেলায় ৩ জন রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন।

শহরে বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে সবচেয়ে বড় আইসোলেশন ইউনিট রয়েছে ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালে। এখানে রয়েছে ৩ শয্যার আইসিইউ।  

হাসপাতাল পরিচালক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, চলতি মাসে ২ জন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে। এরমধ্যে একজনের কোভিড শনাক্ত হয়েছিল। শহরের জেড ইউ মডেল হাসপাতালে একই সময়ে করোনায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির ব্যবস্থাপক মো. গোলাম মোস্তফা।
 
ফেনীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বুধবার (১৪ জুলাই) একদিনে কোভিড-১৯ উপসর্গ এবং পজিটিভ মোট ২২৪ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলো। তাদের ১৯৩ জনের লাগছে অক্সিজেন। অর্থাৎ হাসপাতালগুলোর আইসোলেশন ওয়ার্ডে মোট চিকিৎসাধীন প্রায় ৮৭ শতাংশ রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে।  

ফেনী জেনারেল হাসাপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রিপন নাথ জানান, বুধবার পর্যন্ত হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে মোট ভর্তি আছেন ১১৬জন, এদের মধ্যে অক্সিজেন সেবা দেওয়া হচ্ছে ১১৩ জনকে এবং ৩৭ জন কোভিড পজিটিভ।

দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুবাইয়েত বিন করিম জানান, বুধবার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২২ জন রোগী, এদের মধ্যে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে ১২ জনকে এবং পজিটিভ রয়েছেন ১৭ জন রোগী।

ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শিহাব উদ্দিন রানা জানান, দুই সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২২ জন রোগী, এদের মধ্যে ২০ জনকেই অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে এবং পজিটিভ রয়েছেন ৯ জন রোগী।

ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ২ সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৪৪ জন রোগী, এদের মধ্যে ৪৪ জনকেই অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে এবং পজিটিভ রয়েছেন ২২ জন রোগী।  

জেড ইউ মডেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. গোলাম মোস্তফা জানান, ১৪ দিনে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২০ জন রোগী, এদের মধ্যে ১৬ জনকেই অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে এবং পজিটিভ রয়েছেন ২০ জন রোগী।

গেল দুই সপ্তাহে ফেনীতে গড় শনাক্তের হার ছিল ১৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ হলেও গতকাল বুধবার (১৪ জুলাই) শনাক্তের হার হচ্ছে ৪৬ দশমিক ৪ শতাংশ।  

শনাক্তের এমন উর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রিপন নাথ জানান, বর্তমানে শনাক্তকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৮০ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। করোনার এ ধরনটিতে মৃত্যুহার এবং প্রকটতা ব্যাপক।

করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করলেও একই প্রসঙ্গে ফেনী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এসএসআর মাসুদ রানা বলেন, মানুষ যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। ফলে এ করোনা ব্যাপ্তি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি মাসের  ১৪ দিনে ফেনীর মোট ৩ হাজার ২১০টি নুমনা পরীক্ষার করে ১ হাজার ৪ শ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। নমুনা অনুপাতে শনাক্তের হার ৪৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। এ যাবতকালের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২১
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।