রাজশাহী: কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে আছে হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ড। দুই বেডের ফাঁকা জায়গায় বসানো হয়েছে আরও একটি বাড়তি বেড।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চালচিত্র এখন অনেকটা এমনই। সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসার জন্য এমন দুর্ভোগ, কান্না আর আহাজারি। হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনরা বলছেন, জায়গা না পেলেও একটু ভালো চিকিৎসার আশায় তারা এখানে কষ্ট করে অবস্থান করছেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা মিলছে না। এর ওপর এখানকার নার্সদের ব্যবহার খুবই খারাপ। কথায় কথায় তারা উগ্র আচরণ করছেন। এছাড়া ভর্তির পর টানা কয়েক দিন কেটে যাচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেই। হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চক্কর কাটতেই রোগীর অবস্থা বেগতিক হয়ে যাচ্ছে। গুরুতর হওয়ার পরই মিলছে চিকিৎসা। এভাবে অনেকেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
তবে রামেক কর্তৃপক্ষ বলছে- রাজশাহীতে করোনা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। ধীরে ধীরে করোনার সংক্রমণ কমছে। আর অল্প খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষারও সুযোগ বেড়েছে এ হাসপাতালে। এতে করোনা রোগী কমলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাধারণ রোগীর সংখ্যা। গেল এক সপ্তাহে ৪ হাজার ৭৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। অথচ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা এক হাজার ২শ’। ফলে এত কম সংখ্যক শয্যার বিপরীতে কয়েকগুণ বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসায় তারা বেকায়দায় পড়ছেন। কেবল রাজশাহী নয়, খুলনা ও রংপুর বিভাগের রোগীরাও আসছেন উন্নত চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে। তাই সক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী নিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
রামেক হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভর্তি হওয়া অসুস্থ রোগীরা চিকিৎসার জন্য বেড বা ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে বারান্দা, চলাচলের রাস্তায়, দায়িত্বরত ডাক্তারদের চেম্বারের সামনে, লিফটের সামনে, বাথরুমের সামনে এমনকি সিঁড়ির ঘরেও আশ্রয় নিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি রোগীর চাপ মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ডে। এছাড়া হাসপাতালের সব জায়গায় রোগী ও স্বজনদের অবস্থান লক্ষণীয়।
রাজশাহীর পবা এলাকা থেকে ছোট ছেলের চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছেন তাসলিমা বেগম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ছেলের পেটের সমস্যার জন্য কয়েকটি পরীক্ষা দিয়েছিলেন চিকিৎসক। সবগুলো শেষ করেছেন। কিন্তু এখন চিকিৎসকের খোঁজ নেই। এদিকে ছেলেটা পেটের ব্যথায় কেবল চিৎকার করছে। নার্সকে বলতে গিয়ে ধমক খেয়েছেন। কী করবেন, কিছু ভেবে পাচ্ছেন না।
রাজশাহীর দুর্গাপুর থেকে রোগী নিয়ে এসেছিলেন আতাহার আলী। তিনি বলেন, ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে বারান্দায় বিছানা পেতে নিয়েছেন। তবুও যদি একটু ভালো চিকিৎসা পাওয়া যায়। কিন্তু কোনো বিষয়ে নার্সদের জিজ্ঞেসা করলে তারা উত্তর না দিয়ে বরং খারাপ ব্যবহার করে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আগের চেয়ে চিকিৎসার মান বেড়েছে। হাসপাতালের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক পরীক্ষারও সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। ফলে রাজশাহী ছাড়াও রংপুর ও খুলনা বিভাগ থেকে অনেক রোগী আসছেন। তাই হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। এ অবস্থায় অবকাঠামো ও জনবল সংকট তৈরি হয়েছে। তাই প্রায় সময় সবাইকে সব সুবিধা সমানভাবে দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে এরপরও আমরা হাসপাতালের রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২১
এসএস/আরবি