ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী, হাসপাতালে মিলছে না শয্যা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২২
বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী, হাসপাতালে মিলছে না শয্যা

রাজশাহী: রাত থেকে বমি, এরপর শুরু হয় পাতলা পায়খানা। কয়েক দফায় স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবন করেন সালমা বেগম।

তবুও কাজ হয় না, উল্টো শরীর দুর্বল লাগতে শুরু করে। নড়াচড়াও করতে পারছিলেন না। অবস্থার অবনতি দেখে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ছুটে আসেন।

কিন্তু শয্যা নেই! তাই শয্যা সংকটের কারণে হাসপাতালের বারান্দায় শুয়েই স্যালাইন নেন। আর স্যালাইনের প্যাকেট ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন তার ছেলে সিরাজুল ইসলাম।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রাতে হঠাৎ মায়ের বমি শুরু হয়। শরীর খুব দুর্বল। তাই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এখন স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে, ডাক্তার ওষুধ দিয়েছেন। এখন কিছুটা ভালোর দিকে।

দুই বছরে শিশু আবরার সাইফকে নিয়ে মা সেলিনা আক্তার হাসপাতালে ছুটে এসেছেন। শয্যা খালি না পেয়ে হাসপাতালের মেঝেতে ছেলেকে নিয়ে বসেছিলেন।  

তিনি বলেন, ছেলে দুই দিন যাবৎ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। এখন চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য অপেক্ষা করছি।

রাজশাহীতে দাবদাহের কারণে দিন দিন ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সেইসঙ্গে রোগীর চাপ বাড়ছে হাসপাতালে। এতে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাসপাতালে বর্তমানে ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ রোগী ভর্তি আছেন। শয্যা খালি না থাকায় মেঝেতে রেখেই রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে বৈদ্যুতিক পাখা না থাকার কারণে গরমে নাজেহাল হচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের পরিবেশ স্যাঁতসেঁতে ও অস্বাস্থ্যকর বলেও রোগীদের অভিযোগ।

গত এক মাসে রামেক হাসপাতালে এক হাজার ৬৩৫ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের তথ্য বলছে, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু থেকে ধীরে ধীরে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ১ মার্চ এখানে ২২ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরপর ৬ তারিখ পর্যন্ত যথাক্রমে ২৭, ২৮, ২৬, ২০ ও ২৬ জন রোগী ভর্তি হন।

গত ৭ মার্চ ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৩৮ জন হয়। এরপর ১৬ মার্চ পর্যন্ত যথাক্রমে ৩১, ৩৯, ৩৮, ৩৪, ৩০, ৪০, ৪৩, ৪৮ ও ৪৫ জন করে রোগী ভর্তি হন। এরপর ১৭ মার্চ একদিনে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি ৫০ জন ছাড়ায়। ১৭ ও ১৮ মার্চ ভর্তি হন ৫২ জন করে রোগী।

১৯ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন যথাক্রমে ৫৮, ৬২, ৫৯, ৭২, ৮০ ও ৮২ জন ভর্তি হন। ২৫ মার্চ রোগী বেড়ে হয় ৯০ জন। এরপর ২৬ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত রোজ ভর্তি হন যথাক্রমে ৮৮, ৯৯, ৭৪, ৯৩, ৬১ ও ৭৮ জন।

গোটা মার্চ মাসে রামেক হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ৬৩৫ জনে। গত ১ এপ্রিল ডায়রিয়ার আক্রান্ত মোট রোগী ভর্তি হন ৮২ জন। যার মধ্যে ৫০ জন ছিল শিশু ওয়ার্ডের রোগী। সর্বশেষ শনিবার (২ এপ্রিল) আরও ৮২ জন রোগী ভর্তি হন।

এদিকে হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের শয্যা দেওয়া না। ওয়ার্ডের ভেতর মেঝেতেও তাদের থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। ডায়রিয়া রোগীদের থাকার স্থান হচ্ছে ওয়ার্ডের বাইরে একেবারে মানুষের চলাচলের রাস্তায়।

রোববার (৩ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দায় রোগীদের ভিড়। একদিকে গরম অন্যদিকে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীর স্বজনরাও পড়েছেন চরম বিপাকে। রোগীদের অভিযোগ, ওয়ার্ডের ভেতরে রোগীরা মলত্যাগ করতে পারে- এ কারণে তাদের ভেতরে রাখা হচ্ছে না।

জানতে চাইলে হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় চিকিৎসাধীন সালমা আক্তার (১৮) বলেন, ডায়রিয়ার কারণে শুক্রবার দুপুরে ভর্তি হয়েছি। শনিবার সকাল পর্যন্ত তিনটি স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। এখন কিছুটা ভালো লাগছে।

এক ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন বরেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী ফারুক হোসাইন বলেন, একটু পর পর পাতলা পায়খানার পাশাপাশি বমিও হচ্ছে। গত একদিনে ১০-১৫ বার টয়লেটে গিয়েছি। আজ ভর্তির পর থেকেই স্যালাইন চলছে। ওয়ার্ডের ভেতরে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। বারান্দায় প্রচণ্ড গরম এজন্য খুবই কষ্ট হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের এমন আচরণ অমানবিক।

হাসপাতালের নার্স জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, প্রতিদিন ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে স্যালাইন ও ওষুধসহ প্রথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলে অধিকাংশ রোগীর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।

জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক খলিলুর রহমান বলেন, শীত থেকে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে গরম এসেছে। এখন গরম যত বাড়ছে, ডায়রিয়া রোগীও তত বাড়ছে। তৃষ্ণা মেটাতে মানুষ বাইরের বিভিন্ন ধরনের পানীয় কিংবা শরবত খাচ্ছেন। এর ফলে তারা পানিবাহিত এ ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

রামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, মার্চের মাঝামাঝি থেকে রোগী খুবই বেশি হচ্ছিল। দু’একদিন ধরে একটু কমছে। রোগী আরও বাড়বে নাকি কমবে তা বলা যাবে না। তবে চিকিৎসার জন্য আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২২
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।