ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেলেও অন্তরার লেখাপড়া অনিশ্চিত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২২
মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেলেও অন্তরার লেখাপড়া অনিশ্চিত অন্তরা খাতুন

রাজশাহী: ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে মেধা তালিকায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন অন্তরা খাতুন।

ডাক্তারি পড়ে একজন মানবিক চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষের সেবা করার স্বপ্ন রয়েছে তার।

কিন্তু তার সেই স্বপ্ন যেন স্বপ্নই হয়ে যেতে বসেছে। অর্থাভাবে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারছেন না তিনি। তার চোখ মুখেও এখন হতাশার ছাপ।

অন্তরার বাবা নেই। মা অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে সংসার চালান। জন্মের পর থেকেই জীবনের সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত লড়াই চলছে। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে চলে সংসার। সংগ্রামী জীবন তার। অভাব নিত্যসঙ্গী হলেও কখনও লেখাপড়ার হাল ছাড়েননি অদম্য মেধাবী অন্তরা। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন অন্তরা।

অন্তরা রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নের চন্ডিপুর বড় ছয়ঘটি গ্রামে ছোট একটি ঘরে বসবাস করে। বাবা আলাউদ্দিন তার দুই বছর বয়সেই মারা যান। ভাই সোহেল রানাকে টাকার অভাবে পড়াতে পারেনি। বর্তমানে তিনি রাজমিস্ত্রির দিন হাজিরা হিসেবে কাজ করেন। তবে অন্তরাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন মা রসুনা বেওয়া।  

মেয়েকে অনেক কষ্টে স্কুলে ভর্তি করেন। অন্তরা খাতুন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চন্ডিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এরপর মেয়েকে লেখাপড়া করানোর কোনো অর্থ সংগ্রহ করতে পারছিলেন না রসুনা বেওয়া। বসতবাড়ির ভিটা ছাড়া আর কোনো জমি নেই তার। নিরুপায় হয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ শুরু করেন। এরপর মেয়েকে ভর্তি করেন বাঘা সরকারি শাহদৌলা কলেজে। সেখানেও অন্তরা জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।

অন্তরার মা রসুনারা বলেন, অনেক স্বপ্ন থাকলেও অর্থের কারণে সেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না। তিন সদস্যের পরিবার খুব কষ্ট চলে। অন্তরাকে মেডিক্যালে ভর্তি করানোর টাকা জোগাড় করতে পারছি না। কেউ যদি একটু সাহায্য করতেন তাহলে আমার মেয়ে তার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যেতে পারতো।

জানতে চাইলে অন্তরা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন ৬-৭ ঘণ্টা পড়ালেখা করেছি। পাশাপাশি প্রতিবেশী ছেলে-মেয়েদের টিউশন করিয়েছি। আবার কখনও কখনও মায়ের সঙ্গে হাতের কাজ করেছি। এই আয় থেকে নিজের পড়ালেখা খরচের পাশাপাশি সংসারের খরচ করেছি। মে মাসের মেডিক্যালে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে। চিকিৎসক হয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই। এমন অবস্থায়  পরিবারে আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় মেডিক্যালে ভর্তিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

রাজশাহীর বাজুবাঘা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও চন্ডিপুর উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, অন্তরা সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে এমবিবিএস কোর্সে মেধা তালিকায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। বেশ কষ্টে সংসার চলে তাদের। ফলে মেডিক্যালে পড়ার অর্থের জোগান দিতে এ পরিবারের পক্ষে খুবই কঠিন হবে। তারা সহযোগিতা করবেন। তবে, সমাজে অনেক বিত্তবান রয়েছেন। তারা কেউ সহযোগিতা করলে অন্তুরার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২২
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।