ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প

প্রস্তুত সিইটিপি, অপেক্ষা ট্যানারির

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৬
প্রস্তুত সিইটিপি, অপেক্ষা ট্যানারির ছবি: শাকিল- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সাভার ট্যানারি শিল্পনগরীতে নির্মিত সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান (সিইটিপি)। ট্যানারি বর্জ্য পেলেই পরিশোধনের কাজ শুরু করতে পারবে সিইটিপি।


 
সাভার উপজেলার বলিয়াপুর ইউনিয়নে শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) স্থাপন করতে যাচ্ছে ট্যানারি শিল্পনগরী। সেখানে চীনা কোম্পানির সহায়তায় নির্মিত হয়েছে সিইটিপি। এর ফলে বহুল প্রতীক্ষিত হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর সহজেই সম্ভব।
 
শনিবার (২৭ আগস্ট) নতুন এ ট্যানারি শিল্পনগরী ঘুরে জানা গেছে, পাইপ লাইনের মধ্য দিয়ে ট্যানারি বর্জ্য নিয়ে পরিশোধন করা হবে সিইটিপিতে। এর চারটি ডিস (পুকুরের মতো চারপাশে ওয়াল দিয়ে তৈরি) রয়েছে। ব্রাইটেক্স চেম্বারে সেখান থেকে রিফাইন হয়ে সলিড চেম্বারে যাবে। এরপর ঢুকবে ইকুলাইজেশন ট্যাংকে। এ ট্যাংক থেকে পাম্পের মাধ্যমে পানি এবং বাতাস দিয়ে বর্জ্যে অক্সিজেন দেওয়া হবে। এখান থেকে বর্জ্য যাবে প্রাইমারি অক্সিডাইজেশন ট্যাংক ‘এ’ তে।
 
এরপর যাবে সেকেন্ডারি অক্সিডাইজেশন ট্যাংক ‘বি’ তে। ইকুলাইজেশন ট্যাংক থেকে বর্জ্যের একাংশ যাবে ডজিং রুম বা ব্লোয়ার মেশিনে। অক্সিডাইজেশন ডিস  ‘এ’ ও ‘বি’ থেকেও একাংশ যাবে ব্লোয়ার মেশিনে। সেখান থেকে সলিড ট্যাংক ও সলিড রি-অ্যাকশন ট্যাংক হয়ে কয়েক ধাপে ট্যানারি বর্জ্য পরিশোধিত হবে।  
 
ট্যানারির বিষমুক্ত তরল চলে যাবে ধলেশ্বরী নদীতে। আর ডাম্পিং এর বর্জ্য দিয়ে তৈরি হবে বিদ্যুৎ। সিইটিপি’র বিদ্যুৎ মেটানো হবে ৪০ মেগাওয়াটের নিজস্ব পাওয়ার স্টেশন থেকে।
 
সিইটিপি ঘুরে দেখা গেছে, প্রাথমিকভাবে পরিবেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর হোয়াইট ব্লু  বর্জ্য পরিশোধনের সব ব্যবস্থাই করা হয়েছে। এজন্য চীন থেকে আমদানি করা পাম্প, প্যাডেল সিস্টেম পাম্প, ডিটক্সাইড ব্লোয়ার ও ছাকনি বা স্প্রিনিং মেশিন বসানো হয়েছে।

সিইটিপিতে ২৫ হাজার কিউবিক মিটার বর্জ্য পরিশোধনের সক্ষমতা রয়েছে।
 
সিইটিপি’র প্রকল্প পরিচালক যুগ্ম সচিব মো. আব্দুল কাইয়ুম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত। ট্যানারি এলেই বর্জ্য দিয়ে কাজ শুরু করতে পারবো’।
 
সরেজমিনে দেখা গেছে, রিলায়েন্স ট্যানারি বর্জ্য দিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজও শুরু করেছেন সিইটিপি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।  
 
তবে এখনো সব ট্যানারি সাভারে চালুর অবস্থায় যায়নি। এবারের ঈদ-উল আযহায় ৩০টির মতো ট্যানারি হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তরের পর্যায়ে থাকলেও বেশিরভাগই প্রাথমিক কাজ শুরুই করতে পারেনি।
 
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ট্যানারি বর্জ্য না পেলেও সিইটিপি চালু রাখতে হলে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকা ব্যয় হবে।
 
সাভারের বলিয়াপুরে ২০০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী। এর মধ্যে সাড়ে ১৭ একর জায়গায় স্থাপিত হয়েছে সিইটিপি। ২০০৩ সালের ১৬ আগস্ট একনেকে চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০০৫ সালে। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বেড়ে গেছে।

শিল্পনগরীটিতে ২০৫টি প্লটে ১৫৫টি ট্যানারি স্থাপন করা হবে।                   

গত ১৮ জুলাই রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর না করা পর্যন্ত ১৫৪ ট্যানারি শিল্প মালিককে প্রতিদিন  ১০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।   সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর মাত্র দু’টি ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করা হলেও উৎপাদনে গেছে রিয়ালেন্স।

হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকদের সূত্র জানায়, রোববার (২৮ আগস্ট) থেকে দ্বিতীয় দফায় ট্যানারি স্থানান্তর শুরু হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ডজন খানেক প্রতিষ্ঠান সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে যাবে। অন্যগুলো স্থানান্তরিত হবে ঈদ-উল আযহার পরে।

থেকে যাওয়া ট্যানারিগুলো জরিমানা দিয়েই হাজারীবাগে কারখানা চালাচ্ছে। অনেক ট্যানারি জরিমানা জমাও দিয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৬
এসএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।